আলী আহসান রবি
আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এখানে উপস্থিত হওয়ায় আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজকের প্রেস ব্রিফিংয়ে আমার সাথে উপস্থিত আছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মোঃ সায়েদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জনাব মোহাম্মদ শফিকুল আলম, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব জনাব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো: সারোয়ার বারী।
শুরুতেই আমি ছাত্র জনতার অভ্যুথানের এক বছর পূর্তিতে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি শহীদদের যারা ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন। সেইসাথে স্মরণ করছি যারা আহত হয়েছেন, যাদের অঙ্গহানি হয়েছে, দৃষ্টি হারিয়েছেন এবং ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের অবদানকে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি এবং একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের সুযোগ পেয়েছি।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত বিষয়সমূহের একটি হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। গত ১৬ আগস্ট ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও শহিদ পরিবারকে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন এবং শহিদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিচিতিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস কর্তৃক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত/শহিদের তালিকা ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির মাধ্যমে তালিকা চূড়ান্তভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। আহত সকল রোগীদেরকে দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে সরকারের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া, গুরুতর আহতদের উন্নততর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড এর সুপারিশের প্রেক্ষিতে বিদেশ প্রেরণ করা হয়।
ফ্যাসিস্ট সরকারের নিয়োগপ্রাপ্তগণ হাসপাতালে রোগীদের তথ্যাবলি ও রেজিস্টার ঠিকমতো সংরক্ষণ করেননি বিধায় আহতদের বিষয়ে সঠিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহপূর্বক চিকিৎসা সেবা প্রদান কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এছাড়া ঐ সময়ে অনেক আহত ভয়বশত: তাদের সঠিক তথ্য, ফোন নাম্বার লিপিবদ্ধ করেন নি। এ রকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কিছু ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে রোগীদের তথ্য পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণপূর্বক রোগীদের ঢাকায় এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। আপনারা জানেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে ১৪,০০০ (চৌদ্দ হাজার) এর অধিক সংখ্যক মানুষ আহত হন। আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদানে দেশব্যাপী বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্টাফ এবং সংশ্লিষ্টগণ প্রাণান্তকর পরিশ্রম করেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়েও আহতদের চিকিৎসা প্রদানে বেশকিছু নানামুখী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এখন পর্যন্ত আহত ১৩,৮১১ জনের নাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। গেজেটে প্রকাশিত ভেরিফাইড আহতের সংখ্যা ১২,০৪২ জন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের তালিকা এমআইএস এর মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে। যার সর্বশেষ আপডেট www.medical-info.dghs.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও গণমাধ্যমের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে আহতদের তথ্য পাওয়া মাত্রই তা জেলা সিভিল সার্জনের মাধ্যমে যাচাইপূর্বক এমআইএসের সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে মোট ৪০ জন জুলাই আহতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ করা হয়। যাদের মধ্যে থাইল্যান্ডে ২৬ জন, সিঙ্গাপুরে ১৩ জন এবং রাশিয়ায় ০১ জন রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এ সকল রোগী মূলত: চোখ, অঙ্গহানি, ব্রেইন এবং স্পাইনালকর্ডে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত। গত ২৭ জুলাই ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার নিমিত্তে প্রেরণের লক্ষ্যে ১০৪ জন রোগীর তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তন্মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৩৮ জন রোগীকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সহযোগিতায় মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের আলোকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আরো আহত রোগীকে বিদেশের হাসপাতালে প্রেরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গত ২৭ জুলাই ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সর্বমোট ৭৮ জনকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে।
দেশের চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার পরও বিশ্বের ৭ দেশ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে চিকিৎসা নিশ্চিত করেছি। সিঙ্গাপুর, নেপাল, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য ও থাইল্যান্ড হতে এ পর্যন্ত ২৬ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাংলাদেশে এসে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন এবং বেশ কয়েকজন আহতের সার্জারি সম্পন্ন করেছেন। উল্লেখ্য, ইউকে হতে আগত বিশেষজ্ঞ টিম নিটোর-এ ভর্তিকৃত ১৮ জন রোগীর অপারেশন সম্পন্ন করছেন। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নেপাল হতে আগত বিশেষজ্ঞ টিম ০৪ জনের এবং ইউকে হতে আগত টিম ২৪ জন রোগীর অপারেশন সম্পন্ন করেছেন। সেবা ফাউন্ডেশন, ইউএসএ এবং নেপাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ২ জন রোগীর চোখে কর্নিয়া ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য নেপাল হতে অতি সংবেদনশীল কর্ণিয়াল টিস্যু বাংলাদেশে আনা হয় এবং আন্দোলনে আহত ০২ জনের চোখের কর্ণিয়া ট্রান্সপ্লান্ট, সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এছাড়া, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটকে সেবা ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে ৪০টি কর্নিয়া সরবরাহের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স এবং সংশ্লিষ্ট সকলের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করা হয়েছে। বিদেশ হতে আগত চিকিৎসকগণও এযাবৎ দেশে প্রদত্ত চিকিৎসা প্রটোকল এবং সেবা কার্যক্রম যথোপযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ আহত রোগীদের উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে সহায়তা করবে। অভ্যুত্থানে আহত জুলাই যোদ্ধাদের আজীবন সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির জন্য স্বাস্থ্য কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গেজেটভুক্ত ১২,০৪২ জন জুলাই যোদ্ধার মাঝে ৭,৩৬৩ জনকে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। রোগীদের খাবারের গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে পথ্য খাতে জনপ্রতি বরাদ্দ ১৭৫ টাকা হতে ২৫০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া, আহতদের বিনামূল্যে হাসপাতালের বেড সেবা প্রদান করা হয়েছে।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত জুলাই আহতদের উন্নত মানের চিকিৎসা দিতে সরকার চীনের সহায়তায় রোবটিক ফিজিওথেরাপি সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক রোবটিক ফিজিওথেরাপি সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ জন রোগীকে উচ্চমানের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। রোবোটিক ফিজিওথেরাপি সেন্টারটিতে থাকছে ৬২টি উন্নত রোবোটিক থেরাপি ইউনিট, যার মধ্যে ২২টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে চালিত হবে । এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপির জগতে এক অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ঘটবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা ছাড়াও অন্য রোগীদের জন্যও এ সেন্টার হতে সেবা গ্রহণের দ্বার উন্মোচিত হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আমাদের ঢেলে সাজাতে হচ্ছে। প্রথমদিকে অধিদপ্তরগুলোতে নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) পদায়ন করা হয়েছে। সকল বিভাগ ও জেলায় যথাক্রমে বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জন পদায়ন সম্পন্ন হয়েছে। মেডিকেল শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি), বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) এবং বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা এক্রেডিটেশন কাউন্সিল পুনর্গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। নার্সিং কাউন্সিলে একজন রেজিস্ট্রার নিয়োগ করা হয়েছে। সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ২৩ জন নতুন অধ্যক্ষ ও ১৭ জন উপাধ্যক্ষ পদায়ন করা হয়েছে। ১৫টি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় উচ্চতর স্বাস্থ্য শিক্ষা ও উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
চিকিৎসকদের পেশাগত মর্যাদা ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় ৭,০০০ চিকিৎসককে পদোন্নতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে চিকিৎসকদের ব্যাপক পরিসরে পদোন্নতির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসককে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, পরিচালক, জুনিয়র কনসালটেন্ট ইত্যাদি পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) এর মাধ্যমে ৮৬টি বিষয়ে প্রায় ৮০০ চিকিৎসককে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শূন্য পদে পদোন্নতির কার্যক্রম শেষে সুপার নিউমারারি পদে আরও প্রায় ৬,০০০ চিকিৎসককে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি প্রদান করা হবে।
স্বাস্থ্যখাতে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট সমাধানে আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছি। ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে ৩,০০০ জন চিকিৎসক নিয়োগের জন্য কার্যক্রম চলছে। পিএসসিতে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৪৫তম, ৪৬তম ও ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে আরও ৩,৫০০ জনের অধিক চিকিৎসক নিয়োগ কার্যক্রমও চলমান। এই সকল উদ্যোগের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যাবে এবং চিকিৎসক সংকট অনেকাংশে লাঘব হবে। শুধু চিকিৎসক নয় ইতিমধ্যে পিএসসি’র মাধ্যমে ৩,৫১২ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং এখন পদায়নের কার্যক্রম চলছে। এছাড়া, আরও ৯০০ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন, এবং ৫,০০০ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ৪,০০০ জন মিডওয়াইফের জন্য পদ সৃষ্টি সংক্রান্ত প্রস্তাব অর্থমন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
এই সরকার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ, নীতি, নীতিমালা প্রণয়ন করেছে বা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। “মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫” এর খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। এটি শিগগিরই অধ্যাদেশে পরিণত হবে। স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নতুন স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের কাজও চলমান রয়েছে। বর্তমানে চীনের অনুদানে রংপুর বিভাগে ১,০০০ শয্যার হাসপাতাল, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রামে ৫০০–৭০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ADB’র অর্থায়নে স্বাস্থ্যখাতে ডিজিটালাইজেশনের একটি প্রকল্প অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া, বিশ্বব্যাংকের সম্ভাব্য অর্থায়নে One Health প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাণী থেকে মানবদেহে ছড়ানো রোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হবে।
আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন হার্টের রিং (coronary stent) এর মূল্য কমানো হয়েছে। স্টেন্টের দাম সর্বোচ্চ ৩৬ শতাংশ কমানো হয়েছে। স্টেন্টের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ হিসেবে ৫% এর অতিরিক্ত অর্থ যেন গ্রহণ করা না হয় সে বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ক্যান্সার নিরোধক ঔষধ প্রস্তুতের জন্য আমদানিকৃত পণ্যের উপর আরোপণীয় উৎসে কর সংগ্রহের হার ৫% হতে হ্রাস করে ২% নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রস্তাবনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হতে দেশে সকল ই-সিগারেট সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে ০১ জানুয়ারি, ২০২৫ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আপনারা জানেন গত ২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা প্রদান শুরু করে। সরকারি বেসরকারি আটটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। তাদের মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ন রোগীদের বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এ দুর্ঘটনার শিকার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পাইলটসহ এ পর্যন্ত ৩৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে ৩৪ জন রোগী ভর্তি আছে। দেশিয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াও সিঙ্গাপুর চীন ও ভারত থেকে বিশেষজ্ঞ এসে চিকিৎসা প্রদান করেছে। এছাড়া যুক্তরাজ্য ও একটি চিকিৎসক দল পাঠাবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মানসিক আঘাত প্রশমনে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে চালু করা হয়েছে হটলাইন, বিশেষ ‘আউটডোর সাইকিয়াট্রিক সেল’ এবং অন্তর্বিভাগে সংরক্ষিত বেড। পাশাপাশি মানসিকভাবে বিপর্যস্তদের সহায়তায় দ্রুত গঠন করা হয়েছে একটি বিশেষ কমিটি। চালু হয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে আউটডোর সেবা এবং মাঠপর্যায়ে আউটরিচ কার্যক্রম। পাশাপাশি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) এর সহায়তায় তিন শিফটে হটলাইন চালু রাখা হয়েছে, যাতে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যেকোনো ব্যক্তি সরাসরি পরামর্শ নিতে পারেন।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, মোবাইল : ০১৬৪৩৫৬৫০৮৭, ০১৭১১৪৪৭৫২২, অফিস : ৪/এ, প্রধান সড়ক, আটি মডেল সোসাইটি, আটি, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১২, ইমেইল : somoyerbuletin@gmail.com
© All rights reserved © SomoyerBulletin