আলী আহসান রবি : শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সাথে জার্মান ফেডারেল প্রজাতন্ত্রের সংসদ সদস্য Mr. Boris Mijatovic এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়।
আজ রবিবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎকালে শ্রম ও নৌপরিবহন খাতের বিভিন্ন ইস্যুতে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিনিময় হয়। বাংলাদেশের শ্রম খাতের উন্নয়ন, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে জিআইজেড এর কার্যক্রম, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীল জাহাজ শিল্পে জার্মান বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মেরিটাইম কান্ট্রি। মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন একটি গভীর সমুদ্রবন্দর ছাড়াও বাংলাদেশের ৩টি সমুদ্রবন্দর রয়েছে। ৫৪টি অভ্যন্তরীণ নদী বন্দর রয়েছে। দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বিভিন্নভাবে মেরিটাইম সেক্টরের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের শিপইয়ার্ডগুলোতে আন্তর্জাতিকমানের সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি জাহাজ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে রপ্তানি হচ্ছে। জার্মান বিনিয়োগকারীরা এ দেশের ক্রমবিকাশমান জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগ করে দক্ষ ও সস্তা শ্রম বাজারের সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। এছাড়াও মাতারবাড়িতে একটি আন্তর্জাতিকমানের ডকইয়ার্ড নির্মাণেও জার্মান বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আহ্বান জানান।
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) কাউন্সিলের আসন্ন (২০২৬-২৭ মেয়াদে) নির্বাচনে ক্যাটাগরি ‘সি’-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা আইএমও নির্বাচনে বাংলাদেশের পক্ষে জার্মান সরকারের সমর্থন কামনা করেন। তিনি আইএমও ভুক্ত সকল সদস্য রাষ্ট্রের মেরিটাইম সেক্টরের উন্নয়নে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন জার্মানীর এ সংসদ সদস্য। নৌপরিবহন উপদেষ্টা পরিবেশ সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আইএমও কনভেনশন বাস্তবায়ন, ডিজিটালাইজেশন এবং সমুদ্র দূষণ রোধে বাংলাদেশের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে জার্মানীর প্রতিনিধিদলকে অবহিত করেন।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা জাহাজ নির্মাণ শিল্প, বন্দর অবকাঠামো উন্নয়নসহ অন্যান্য সেক্টরে বাংলাদেশ ও জার্মানের মধ্যকার বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। শ্রম আইন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধনে শ্রম অধিকার সম্পর্কিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১১ দফার আলোকে গৃহীত পদক্ষেপ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার রোডম্যাপ, শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও ইউরোপীয় অ্যাকশন প্ল্যানে অন্তর্ভুক্তির অনেক বিষয়ে আইনি বিধান সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক শ্রমমান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অধিকতর সংশোধনী আনয়ন করা হচ্ছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে শিশুশ্রম বন্ধে ILO কনভেনশন ১৩৮ ও ১৮২ অনুস্বাক্ষর করেছে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইএলও কনভেনশন C155, C187 এবং কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধে C190 সম্প্রতি অনুস্বাক্ষর করেছে। এ তিনটি কনভেনশন অনুস্বাক্ষরিত হওয়ায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে আইএলও’র ১০টি মৌলিক কনভেনশন অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হলো। কনভেনশন তিনটির মধ্যে কনভেনশন ১৮৭ ও কনভেনশন ১৫৫ আইএলও’র মৌলিক কনভেনশন। ২০২২ সালে এ দুটিকে মৌলিক কনভেনশন হিসেবে গ্রহণ করে আইএলও।
উপদেষ্টা শ্রমিক অধিকার রক্ষা, শোভন কর্মপরিবেশ ও পেশাগত স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। এসময় তিনি জার্মান সাংসদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ক্রেতা ব্র্যান্ডগুলোর কাছে বাংলাদেশী পণ্যের জন্য প্রত্যাশিত ন্যায্য মূল্য (ফেয়ার প্রাইজ) নিশ্চিত করার জোরালো অনুরোধ জানান। উভয় পক্ষই শ্রম ও নৌপরিবহন খাতে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও বাড়াতে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন সুযোগ বৃদ্ধির ওপর জোরদার করেন।
এ সময় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) দেলোয়ারা বেগম, বাংলাদেশে অবস্থিত জার্মান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত Mr. Amb. Rudiger Lotz, গবেষণা সহকারী Mrs. Denise-Kathrin Bentele এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, মোবাইল : ০১৬৪৩৫৬৫০৮৭, ০১৭১১৪৪৭৫২২, অফিস : ৪/এ, প্রধান সড়ক, আটি মডেল সোসাইটি, আটি, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১২, ইমেইল : somoyerbuletin@gmail.com
© All rights reserved © SomoyerBulletin