আলী আহসান রবি : আজ পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ীতে আনুষাঙ্গিক সুবিধাদিসহ নদী বন্দর নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নির্মিত নগরবাড়ী নদী বন্দর আধুনিক টার্মিনাল কমপ্লেক্সের শুভ উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব দেলোয়ারা বেগম।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে বলেন ‘‘উত্তরবঙ্গের সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাবে নগরবাড়ী নদী বন্দর আধুনিক টার্মিনাল কমপ্লেক্স। নগরবাড়ী নদী বন্দর দেশের পশ্চিমাঞ্চলকে নদীপথে রাজধানী ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ গেটওয়ে। আধুনিক এই টার্মিনাল কমপ্লেক্স চালু হলে পণ্য পরিবহন আরও সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ হবে— যা নদীভিত্তিক বাণিজ্যকে নতুন গতি দেবে।”
“নগরবাড়ীতে আনুষাঙ্গিক সুবিধাদিসহ নদী বন্দর নির্মাণ” শীর্ষক প্রকল্পটি রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর উত্তরবঙ্গের সাথে নৌপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে নগরবাড়ী এলাকায় উন্নত ও আধুনিক বন্দর অবকাঠামো সুবিধাদি নির্মাণের লক্ষ্যে ২০ জুন ২০১৮খ্রিঃ তারিখে অনুমোদন লাভ করে এবং ০১ জুলাই ২০১৮ হতে ৩০ জুন ২০২৫খ্রিঃ তারিখ মেয়াদে মোট ৫৫৬.৯০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে।
পাবনা জেলার অন্তর্গত বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানাধীন যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত নগরবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী ঘাটে দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে নৌপথে মূলত: সার, সিমেন্ট, পাথর, বালি, কয়লা, খাদ্যদ্রব্যাদি এবং অন্যান্য বাল্ক সামগ্রী জাতীয় মালামাল উঠানামা করে সড়ক পথে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পরিবাহিত হয়ে থাকে। ইতোপূর্বে এ ঘাটটি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত আরিচা নদী বন্দর দ্বারা পরিচালিত হতো। ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু প্রতিষ্ঠিত হবার পূর্বে বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা, পদ্মা নদীর দ্বারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আরিচা-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-নগরবাড়ী নামে ফেরিঘাট ২টি যথাক্রমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নৌ চলাচলে আরিচা নদী বন্দরের আওতায় পরিচালিত হতো। যমুনা সেতু হওয়ায় ট্রাফিক চাপ লাঘবের পাশাপাশি পরবর্তীতে যমুনা নদীর নাব্যতা সমস্যা ও নদী ভাঙ্গনের ফলে নগরবাড়ী হতে ফেরিঘাট কাজিরহাটে স্থানান্তর করা হলেও ব্যবহারকারীদের কাছে মালামাল পরিবহনে নগরবাড়ী ঘাটের গুরুত্ব পূর্বের মতোই রয়ে যায় এবং এ ঘাট বিশেষত মালামাল পরিবহনের একটি ঘাটে রুপান্তরিত হয়। এ ঘাটে কোন প্রকার সরকারী বা বেসরকারী প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাদি ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিকভাবেই বন্দর কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল এবং উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ মালামাল এ বন্দরের মাধ্যমে পরিবাহিত, প্রতিস্থাপিত এবং একত্রিকরণ হয়ে আসছিল। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের কৃষি কাজের সারের চাহিদার প্রায় ৫০-৬০% এ ঘাট দিয়ে উঠানামা করে। যার ফলে এ এলাকায় নগরবাড়ী নদী বন্দর আধুনিক টার্মিনাল কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, নগরবাড়ী নদী বন্দর আধুনিক টার্মিনাল কমপ্লেক্সটি ৩৬.০০ একর জমির উপর ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন করে নির্মিত হয়েছে।
*প্রকল্পের মূখ্য উদ্দেশ্য/সুবিধাসমূহঃ*
•নগরবাড়ী এলাকায় ইতোমধ্যে পরিবাহিত প্রায় ৩.০০ মিলিয়ন টন মালামালের সুষ্ঠু ও নিরাপদ উঠানামা নিশ্চিতকরণ, ক্রমবর্ধমান বাল্ক প্রকৃতির মালামাল পরিবহন চাহিদার অনুপাতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রদান, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে নৌপরিবহন মাধ্যমকে অন্যতম লজিস্টিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিতকরণ, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ব্যবসা বাণিজ্যকে সমৃদ্ধশালী ও প্রসার ঘটানো; এ অঞ্চলের বেকারত্ব হ্রাস; এবং সার্বিকভাবে যমুনা সেতুর উপর ভারী যান চলাচল হ্রাস সম্ভব হয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় আরসিসি (জেটি, ব্যাংক রিভেন্টমেন্ট স্ট্রাকচার, সংযোগ সড়ক, আরসিসি ওপেন স্টোরেজ, পার্কিং লট ও ইন্টারনাল পোর্ট রোড, আরসিসি র্যাম্প এবং স্টেয়ার), বন্দর ভবন, প্রশাসনিক ভবন, পরিদর্শন বাংলো, ডরমেটরি, পাইলট হাউজ, শ্রমিক বিশ্রামাগার, টয়লেট কমপ্লেক্স, ওয়্যারহাউজ (গুদাম), ওপেন শেডেড ওয়্যারহাউজ, ওয়ার্কশপ, নিরাপত্তা বেষ্টনী সীমানা প্রাচীর, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পানি সরবরাহ, সুয়ারেজ ব্যবস্থা, আধুনিক অগ্নি নির্বাপন এবং সম্পূর্ণ টার্মিনাল এলাকা বিদ্যুতায়নের সুব্যবস্থা রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র এই প্রকল্পের মাধ্যমে আধুনিক টার্মিনাল কমপ্লেক্স , জেটি, প্রশাসনিক ভবন, গুদামঘর, শ্রমিক বিশ্রামাগার, ড্রেনেজ ও সড়ক সংযোগসহ সবধরনের আনুষাঙ্গিক অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। এর ফলে উত্তরবঙ্গের সাথে সমগ্র দেশের নৌবাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অতিথিরা।
দিনের পরবর্তী অংশে নৌপরিবহন উপদেষ্টা আরিচা (মানিকগঞ্জে) আন্ধারমানিক-০১, আন্ধারমানিক-০২ নামক ২টি ২৮ ইঞ্চি ও মহানন্দা-০১ ও মহানন্দা-০২ নামক ২টি ২৪ ইঞ্চি মোট ৪টি কাটার সাকশন ড্রেজার শুভ উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব দেলোয়ারা বেগম।
নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ১০০টি নদী খনন করে প্রায় ৮০০০ কি:মি: নৌ-পথের নাব্যতা উন্নয়ন এবং ক্রমবর্ধমান ড্রেজিং চাহিদা মিটানোর লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং সক্ষমতা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে “৩৫টি ড্রেজার ও সহায়ক জলযানসহ আনুষাঙ্গিক সরঞ্জমাদিসহ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ (১ম সংশোধিত)”-শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা যায়। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়নের নিমিত্ত ২০১৮-১৯ হতে ২০২৬-২৭ অর্থ বছরে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্পের ৩টি চুক্তির আওতায় ২টি ২৮ ইঞ্চি ড্রেজার, ২টি ২৫ ইঞ্চি ড্রেজার ও ৪টি ক্রেনবোটসহ আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়।
আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় CCGP এর অনুমোদনের প্রেক্ষিতে ২টি প্যাকেজের অধীনে ৩৭৮৭০.৯২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২টি ২৮ ইঞ্চি কাটার সাকশন ড্রেজার ও সহায়ক জলযানসহ আনুষাঙ্গিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ এবং অপর একটি প্যাকেজের আওতায় ২১৩৬১.০৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২টি ২৪ ইঞ্চি কাটার সাকশন ড্রেজার ও সহায়ক জলযানসহ আনুষাঙ্গিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ কাজের লক্ষ্যে কর্নফুলি শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড এর সাথে যথাক্রমে ১৬-০১-২০২২ এবং ২৩-০৩-২০২২ তারিখ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন এ ড্রেজারগুলোর নির্মাণকাজ IHC HollandB.V., The Netherlands এর ডিজাইন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি Lloyd’s Register এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও দেশী প্রকৌশলীদের কারিগরি দক্ষতায় সম্পন্ন হয়েছে। ড্রেজারসমূহে USA এর ইঞ্জিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান Cummins Inc. এর ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্দ্যেগে কর্নফুলি শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড নবনির্মিত বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজার “আন্ধারমানিক-০১, আন্ধারমানিক-০২, মহানন্দা-০১ ও মহনন্দা-০২” আজ ৮ই নভেম্বর ২০২৫ উদ্বোধন করা হলো। ২৮ ইঞ্চি কাটার সাকশন ড্রেজারের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২০০০ ঘ.মি./ঘন্টা এবং ২৪ ইঞ্চি কাটার সাকশন ড্রেজারের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১০০০ ঘ.মি./ঘন্টা। নতুন সংগৃহীত ৪টি ড্রেজার দেশের নাব্যতা রক্ষা, পণ্য পরিবহন সহজীকরন ও ফেরী নৌপথসমূহের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নগরবাড়ী ও আরিচার উভয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন, অর্থ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন সংস্থার চেয়ারম্যান/মহাপরিচালক/ব্যবস্থাপনা পরিচালক/কমান্ড্যান্ট ও সদস্যবৃন্দ, বিআইডব্লিউটিএ'র (সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ), বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তৃণমূল ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ইজারাদারবৃন্দ, বিভিন্ন নৌযানের মালিক ও সংস্থার নেতৃবৃন্দ, আইডব্লিউএম ও সিইজিএস নামক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী, স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মী বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, মোবাইল : ০১৬৪৩৫৬৫০৮৭, ০১৭১১৪৪৭৫২২, অফিস : ৪/এ, প্রধান সড়ক, আটি মডেল সোসাইটি, আটি, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১২, ইমেইল : somoyerbuletin@gmail.com
© All rights reserved © SomoyerBulletin