ঢাকা ০৫:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo সিলেটসহ অন্যান্য স্থানে হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ Logo কালিগঞ্জে মৎস্যঘের পরিদর্শন ও চাষীদের সাথে মতবিনিময় করলেন ইউএনও অনুজা মন্ডল Logo কালিগঞ্জে সাবেক এমপি’র ছেলেকে পিটিয়ে যখম করেছে দুর্বৃত্তরা Logo জর্ডানের সাথে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন Logo বাউফলে মটর সাইকেল দুর্ঘটনায় যুবক নিহত অপর যুবকের ডান পা ভেঙে গুরুতর আহত Logo বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অন্দোলনের যোদ্ধা হৃদয়ের কবর জিয়ারত করলেন সাবেক এমপি শহিদুল আলম Logo বাউফলে যুবদল নেতার সাংবাদিক সম্মেলন Logo বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা মামলায় শ্রমিক লীগ নেতা আলমগীর হোসেনকে গ্রেফতার Logo বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আহত হৃদয়ের মৃত্যু, দাফন সম্পন্ন Logo ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্লাটিনাম জুবিলী অনুষ্ঠিত

একুশ মানে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় ভাষা আন্দোলনের সূচনা

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৬:১৮:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৫৩৯ বার পড়া হয়েছে

একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে আজ থেকে ৭৩ বছর আগে ১৯৫২ সালের এই দিনে বুকের রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন ঢাকার রাজপথ। পৃথিবীর ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছিল মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের অভূতপূর্ব নজির।মাতৃভাষার জন্য বাঙালির আত্মদানের এই অনন্য ঘটনা স্বীকৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। বাঙালির সঙ্গে সারা বিশ্বেই দিনটি পালিত হচ্ছে।১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। মায়ের ভাষাকে রক্ষার জন্য রাজপথে আন্দোলন হয়। পাকিস্তানি সরকারি বাহিনীর গুলিতে প্রাণদান করে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা সালাম -বরকত -রফিক-শফিক-জব্বার আরও কত নাম না-জানা সেসব শহীদের আত্মত্যাগে আমরা ফিরে পাই আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা। জাতিসংঘের স্বীকৃতির ফলে একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে সারা বিশ্বে।একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পেছনের ঘটনা জানতে হলে আমাদের একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। মহান ভাষা আন্দোলনের দিন হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি প্রতিবছরই মর্যাদার সঙ্গে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে পালিত হয়ে আসছে। এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা রাজ্যে ‘বাংলা ভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে এই দিনটি।আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করার আগে, দিনটি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দাবি শোনা যায়। তবে এ বিষয়ে প্রথম সফল উদ্যোক্তারা হলেন কানাডার বহুভাষিক ও বহুজাতিক মাতৃভাষা-প্রেমিকগোষ্ঠী।

এই গোষ্ঠী প্রথমে ১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ নামে একটি দিবস ঘোষণার প্রস্তাব উপস্থাপন করে। সেখানে তাঁরা বলেন, বাঙালিরা তাদের মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সেটা ছিল তাদের ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। কাজেই মাতৃভাষা দিবসের দাবিটি খুবই ন্যায়সংগত।১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন ময়দানে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা দেন- ‘উর্দু এবং কেবল উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।মূলত খাজা নাজিমুদ্দিনের এই ভাষণই ভাষা আন্দোলনের দাবানল সৃষ্টি করে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাঙলার ছাত্র-শিক্ষক-জনতাসহ আপামর মানুষ। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ।দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় ধর্মঘটসহ বিক্ষোভ। একুশে ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়। এরই প্রেক্ষিতে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।এক পর্যায়ে ছাত্রদের দৃঢ়তায় ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ঢাকার পলাশীর আমতলায়”বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের সড়ক”এলে নির্বিচারে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ।এতে নিহত হন নাম না জানা আরো অনেকে। এরপর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন। অবশেষে বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি।আমি ক্ষুদ্র কলাম লেখক কবির নেওয়াজ রাজ আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি, একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ শুধু বাংলার বিজয় নয়,বিশ্বের সব মাতৃভাষার বিজয়।বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই বাঙালি জাতির চরম জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। এর পথ ধরেই বাংলার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র জনতা ও লাখো বাঙালির রক্তের বিনিময়ে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম নেয় লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

লেখকঃ মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ
এমএসএস”রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সিসি”জার্নালিজম, এলএলবি।
ইমেইল:razbusinessfile@gmail.com

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সিলেটসহ অন্যান্য স্থানে হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ

একুশ মানে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় ভাষা আন্দোলনের সূচনা

আপডেট সময় ০৬:১৮:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে আজ থেকে ৭৩ বছর আগে ১৯৫২ সালের এই দিনে বুকের রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন ঢাকার রাজপথ। পৃথিবীর ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছিল মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের অভূতপূর্ব নজির।মাতৃভাষার জন্য বাঙালির আত্মদানের এই অনন্য ঘটনা স্বীকৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। বাঙালির সঙ্গে সারা বিশ্বেই দিনটি পালিত হচ্ছে।১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। মায়ের ভাষাকে রক্ষার জন্য রাজপথে আন্দোলন হয়। পাকিস্তানি সরকারি বাহিনীর গুলিতে প্রাণদান করে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা সালাম -বরকত -রফিক-শফিক-জব্বার আরও কত নাম না-জানা সেসব শহীদের আত্মত্যাগে আমরা ফিরে পাই আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা। জাতিসংঘের স্বীকৃতির ফলে একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে সারা বিশ্বে।একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পেছনের ঘটনা জানতে হলে আমাদের একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। মহান ভাষা আন্দোলনের দিন হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি প্রতিবছরই মর্যাদার সঙ্গে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে পালিত হয়ে আসছে। এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা রাজ্যে ‘বাংলা ভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে এই দিনটি।আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করার আগে, দিনটি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দাবি শোনা যায়। তবে এ বিষয়ে প্রথম সফল উদ্যোক্তারা হলেন কানাডার বহুভাষিক ও বহুজাতিক মাতৃভাষা-প্রেমিকগোষ্ঠী।

এই গোষ্ঠী প্রথমে ১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ নামে একটি দিবস ঘোষণার প্রস্তাব উপস্থাপন করে। সেখানে তাঁরা বলেন, বাঙালিরা তাদের মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সেটা ছিল তাদের ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। কাজেই মাতৃভাষা দিবসের দাবিটি খুবই ন্যায়সংগত।১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন ময়দানে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা দেন- ‘উর্দু এবং কেবল উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।মূলত খাজা নাজিমুদ্দিনের এই ভাষণই ভাষা আন্দোলনের দাবানল সৃষ্টি করে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাঙলার ছাত্র-শিক্ষক-জনতাসহ আপামর মানুষ। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ।দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় ধর্মঘটসহ বিক্ষোভ। একুশে ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়। এরই প্রেক্ষিতে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।এক পর্যায়ে ছাত্রদের দৃঢ়তায় ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ঢাকার পলাশীর আমতলায়”বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের সড়ক”এলে নির্বিচারে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ।এতে নিহত হন নাম না জানা আরো অনেকে। এরপর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন। অবশেষে বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি।আমি ক্ষুদ্র কলাম লেখক কবির নেওয়াজ রাজ আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি, একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ শুধু বাংলার বিজয় নয়,বিশ্বের সব মাতৃভাষার বিজয়।বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই বাঙালি জাতির চরম জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। এর পথ ধরেই বাংলার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র জনতা ও লাখো বাঙালির রক্তের বিনিময়ে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম নেয় লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

লেখকঃ মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ
এমএসএস”রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সিসি”জার্নালিজম, এলএলবি।
ইমেইল:razbusinessfile@gmail.com