ঢাকা ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo স্বাধীন সাংবাদিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব Logo ডিএমপির নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় উদযাপিত হলো উল্টো রথযাত্রার বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা Logo পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত, এবং অর্গানিক ফল আমাদের ঐতিহ্যের অংশ —- উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা Logo পটুয়াখালী কলাপাড়ার নীলগঞ্জ মাতব্বর বাড়ি জামে মসজিদের মুয়াজ্জিনের জন্য সর্বপ্রথম মসজিদ কমিটি পেনশন চালু করেছে Logo জানা গেল এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ কবে Logo বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ Logo কাদিহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে বিদায় অনুষ্ঠান অবসরে গেলেন প্রিয় গণিত শিক্ষক মোঃ হবিবর রহমান Logo এলাকার নেতা হিসেবে নয় সন্তান হিসেবে কাজ করবো – প্রিয়াংকা   Logo জনগণের ভালোবাসা নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই: বিএনপি নেতা মাসুদ Logo শেরপুরে ‘বাহাছাস’ এর কমিটি গঠন

২০১৪ সালে ঘিওর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন — বাংলাদেশের রোল মডেল নির্বাচন হতে পারে !

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:৫৮:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪
  • ৬২৬ বার পড়া হয়েছে

আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ঘিওর, মানিকগঞ্জ হিসেবে ১২/০২/২০১৪ তারিখে যোগদান করলাম। একমাস পরেই উপজেলা নির্বাচন। নতুন ইউএনও হিসেবে রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি নির্বাচন সংক্রান্ত প্রস্তুতি নিতে থাকলাম। যতই নির্বাচন সন্নিকটে ততই চারিদিক থেকে কি যেন কথা শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি পরিমিত অভিব্যক্তি প্রকাশ করে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলাম। প্রতিকূল পরিস্থিতি চলে আসতে ছিল। চর্তুমুখি চাপ। আমি অত্যন্ত সহজ স্বাভাবিকভাবে মোকাবেলা করছিলাম। আমি ছিলাম সহকারী রিটার্নিং অফিসার। বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছিল সব ঠিক আছে কিনা? আমি বলেছিলাম সব কিছু ঠিক আছে-ভালো খাবার-দাবারও নির্বাচনের দিন থাকবে। আমার কাছ থেকে প্রেসারগ্রুপ অন্য অভিব্যক্তি প্রত্যাশা করেছিল। এভাবে ১৪/০৩/২০১৪ -রাত প্রায় ১০ টা বাজে – নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য অফিস থেকে বাংলোয় এসি( ল্যান্ড) সহ ফিরছিলাম। প্রিজাইডিং অফিসাররা একেরপর এক ফোন দেয়া শুরু করলেন। তারা যা বললো তা একেবারে বিস্ময়কর নয়, কারণ আগে থেকে কিছুটা ধারণা হয়েছিল। শিক্ষা ক্যাডারের হাবিব-ঘিওর সরকারি কলেজের লেকচারার- কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার। এসিল্যান্ড সহ তার কেন্দ্রে চলে গেলাম। তাকে অভয় দিলাম -ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন হবে। আর্মির অফিসারদের বলে রেখেছিলাম- যে কোন সময় ফোর্স ও সহযোগিতা লাগতে পারে। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন। নির্বাচনের আগের দিন রাতে যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলাম তা ভাযায় প্রকাশ করা যাবে না -সকল ঘটনা বর্ণনাও করা যাবে না। আমার সামনে রাস্তা ছিল সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিজেকেই পুরো কাজে লাগানো। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উপজেলায় ১৪/০৩/২০১৪ তারিখ সন্ধ্যার মধ্যে রিপোর্ট করতে বলা হয়। আমি বাধ্য হই বলতে- আমি সহকারী রিটার্নিং অফিসার-আমাকে নির্বাচন পরিচালনায় এখন থেকে সহযোগিতা করতে হবে। রাত বারোটার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট জিলাল ফোন দেই- মানিকগঞ্জ থেকে রাত সাড়ে বারোটার মধ্যে উপজেলায় আসার নির্দেশনা প্রদান করি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক ও নির্বাচন অফিসার আমাকে সহযোগিতা করতে থাকেন। জিলাল সহ অন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দ্রুত চলে আসেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দের ও আর্মিকে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রেরণ করা হয়। প্রেসারগ্রপের দুইজন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে সম্মানের সাথে উপজেলা সদরে নিয়ে আসা হয়-ভদ্রভাবে সামনে রাখা হয়। রাত চারটা সাড়ে চারটা পর্যন্ত শক্তভাবে কার্যক্রম চলে। বুঝতে পারে-স্রোতের বিপরীতে হলেও ১৫/০৩/২০১৪ তারিখের উপজেলা নির্বাচন ফ্রি-ফেয়ার হবে। তাই ই হয়েছিল ইনশাআল্লাহ। অনেক সময় অনেকে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুপ মন্তব্য করেন। এ প্রেক্ষাপটে সাহসী উচ্চারণ করব- সবাই স্রোতের গা ভাসিয়ে দেয় না, যেমন আমি কোনমতেই দেয় নি। ঘিওর উপজেলাবাসীকে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিয়েছিলাম-আমার সরকারি চাকরি জীবনের সর্বোচ্চ পাওয়া। কোন অন্যায়ের কাছে আল্লাহর রহমতে মাথা নত করে নি, অন্তত নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা সৎ, সাহসী ভংগিমায় উচ্চারণ করতে পারি। ২০১৪ সালের ঘিওর উপজেলা নির্বাচন বাংলাদেশের রোল মডেল নির্বাচন হতে পারে, যে কেউ খোঁজ নিতে পারেন। বাংলাদেশের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ নির্বাচনের কেস স্টাডি করতে পারেন। সে সময় তারুণ্য ছিল, ছিল দ্রোহ, দেশ প্রেম ছিল জনস্বার্থে I did the election free -fair. আমি চাকরি জীবনে কখনো আমি শব্দ পছন্দ করি না, বিশ্বাস করি আমরা-গ্রপ ওয়ার্কে বিশ্বাস করি। কিন্তু এ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি শব্দ ব্যবহার করতে বাধ্য হলাম। প্রিয় দেশবাসীর সদয় অবগতির জন্য।

মোঃ আলমগীর হোসেন
সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার,
ঘিওর, মানিকগঞ্জ

বর্তমানে উপসচিব, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

স্বাধীন সাংবাদিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

২০১৪ সালে ঘিওর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন — বাংলাদেশের রোল মডেল নির্বাচন হতে পারে !

আপডেট সময় ১১:৫৮:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ঘিওর, মানিকগঞ্জ হিসেবে ১২/০২/২০১৪ তারিখে যোগদান করলাম। একমাস পরেই উপজেলা নির্বাচন। নতুন ইউএনও হিসেবে রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি নির্বাচন সংক্রান্ত প্রস্তুতি নিতে থাকলাম। যতই নির্বাচন সন্নিকটে ততই চারিদিক থেকে কি যেন কথা শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি পরিমিত অভিব্যক্তি প্রকাশ করে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলাম। প্রতিকূল পরিস্থিতি চলে আসতে ছিল। চর্তুমুখি চাপ। আমি অত্যন্ত সহজ স্বাভাবিকভাবে মোকাবেলা করছিলাম। আমি ছিলাম সহকারী রিটার্নিং অফিসার। বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছিল সব ঠিক আছে কিনা? আমি বলেছিলাম সব কিছু ঠিক আছে-ভালো খাবার-দাবারও নির্বাচনের দিন থাকবে। আমার কাছ থেকে প্রেসারগ্রুপ অন্য অভিব্যক্তি প্রত্যাশা করেছিল। এভাবে ১৪/০৩/২০১৪ -রাত প্রায় ১০ টা বাজে – নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য অফিস থেকে বাংলোয় এসি( ল্যান্ড) সহ ফিরছিলাম। প্রিজাইডিং অফিসাররা একেরপর এক ফোন দেয়া শুরু করলেন। তারা যা বললো তা একেবারে বিস্ময়কর নয়, কারণ আগে থেকে কিছুটা ধারণা হয়েছিল। শিক্ষা ক্যাডারের হাবিব-ঘিওর সরকারি কলেজের লেকচারার- কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার। এসিল্যান্ড সহ তার কেন্দ্রে চলে গেলাম। তাকে অভয় দিলাম -ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন হবে। আর্মির অফিসারদের বলে রেখেছিলাম- যে কোন সময় ফোর্স ও সহযোগিতা লাগতে পারে। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন। নির্বাচনের আগের দিন রাতে যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলাম তা ভাযায় প্রকাশ করা যাবে না -সকল ঘটনা বর্ণনাও করা যাবে না। আমার সামনে রাস্তা ছিল সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিজেকেই পুরো কাজে লাগানো। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উপজেলায় ১৪/০৩/২০১৪ তারিখ সন্ধ্যার মধ্যে রিপোর্ট করতে বলা হয়। আমি বাধ্য হই বলতে- আমি সহকারী রিটার্নিং অফিসার-আমাকে নির্বাচন পরিচালনায় এখন থেকে সহযোগিতা করতে হবে। রাত বারোটার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট জিলাল ফোন দেই- মানিকগঞ্জ থেকে রাত সাড়ে বারোটার মধ্যে উপজেলায় আসার নির্দেশনা প্রদান করি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক ও নির্বাচন অফিসার আমাকে সহযোগিতা করতে থাকেন। জিলাল সহ অন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দ্রুত চলে আসেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দের ও আর্মিকে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রেরণ করা হয়। প্রেসারগ্রপের দুইজন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে সম্মানের সাথে উপজেলা সদরে নিয়ে আসা হয়-ভদ্রভাবে সামনে রাখা হয়। রাত চারটা সাড়ে চারটা পর্যন্ত শক্তভাবে কার্যক্রম চলে। বুঝতে পারে-স্রোতের বিপরীতে হলেও ১৫/০৩/২০১৪ তারিখের উপজেলা নির্বাচন ফ্রি-ফেয়ার হবে। তাই ই হয়েছিল ইনশাআল্লাহ। অনেক সময় অনেকে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুপ মন্তব্য করেন। এ প্রেক্ষাপটে সাহসী উচ্চারণ করব- সবাই স্রোতের গা ভাসিয়ে দেয় না, যেমন আমি কোনমতেই দেয় নি। ঘিওর উপজেলাবাসীকে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিয়েছিলাম-আমার সরকারি চাকরি জীবনের সর্বোচ্চ পাওয়া। কোন অন্যায়ের কাছে আল্লাহর রহমতে মাথা নত করে নি, অন্তত নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা সৎ, সাহসী ভংগিমায় উচ্চারণ করতে পারি। ২০১৪ সালের ঘিওর উপজেলা নির্বাচন বাংলাদেশের রোল মডেল নির্বাচন হতে পারে, যে কেউ খোঁজ নিতে পারেন। বাংলাদেশের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ নির্বাচনের কেস স্টাডি করতে পারেন। সে সময় তারুণ্য ছিল, ছিল দ্রোহ, দেশ প্রেম ছিল জনস্বার্থে I did the election free -fair. আমি চাকরি জীবনে কখনো আমি শব্দ পছন্দ করি না, বিশ্বাস করি আমরা-গ্রপ ওয়ার্কে বিশ্বাস করি। কিন্তু এ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি শব্দ ব্যবহার করতে বাধ্য হলাম। প্রিয় দেশবাসীর সদয় অবগতির জন্য।

মোঃ আলমগীর হোসেন
সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার,
ঘিওর, মানিকগঞ্জ

বর্তমানে উপসচিব, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়