ঢাকা ০৩:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo “বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডকে অধিদপ্তরে রুপান্তর করা হবে।” – উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ Logo আগামী মাসে প্রতিষ্ঠিত হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর : উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম Logo চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ই-পাসপোর্ট পুরোপুরি চালু করা হবে- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo এসেনশিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানী লিমিটেডকে ঢেলে সাজাতে হবে- স্বাস্থ্য উপদেষ্টা Logo কেরানীগঞ্জে মৎস্য অধিদপ্তরের বিশেষ অভিযানে ১৬৫০ কেজি জাটকা উদ্ধার Logo আইনের বাইরে কোন কাজ করা যাবে না।। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo সমকালীন রাজনীতির মরণফাঁদ ! Logo ছাত্রদলের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের স্লোগান Logo ৬০০ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে ওয়ারী থানা পুলিশ Logo “মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার ‘থ্রি-জিরো তত্ত্ব’ এবং ‘সামাজিক ব্যবসায়’ ধারণাটি বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে সমবায় অধিদপ্তর” উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বীর সেনানিদের বীরত্বগাঁথা-২৪

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:৫৬:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে
ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে মেজর) এইচ এম মঞ্জুর মোর্শেদ, বীর প্রতীক, ই বেংগল (তৎকালীন ইউনিট ৫ ই বেংগল)
ক্যাপ্টেন এইচ এম মঞ্জুর মোর্শেদ, বীর প্রতীক, ই বেংগল পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩০৫ পদাতিক ব্রিগেডের আওতাধীন রাঙ্গামাটি রিজিয়ন এর ঘাগড়া জোনের ৫ ই বেংগল ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার অন্তর্গত কুতুকছড়ি আর্মি ক্যাম্পের কমান্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ তারিখ সকালে গোয়েন্দা সূত্রে তিনি সংবাদ পান যে, কিছুদিন ধরে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়ি ইউনিয়নের এক গ্রামে একদল শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসী ক্যাম্প স্থাপন করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানের পরিকল্পনা করছে। তিনি শান্তি বাহিনীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই তাদের সম্ভাব্য চলাচলের পথে এ্যামবুশ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন।
১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ তারিখ দিবাগত রাতে পরিকল্পনা মোতাবেক সন্ধ্যার পর অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কুতুকছড়ি ক্যাম্প থেকে ১০ জনের টহল দল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। অন্ধকার রাতে পথ চলা ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তীব্র অন্ধকারের পাশাপাশি শীতের ঘন কুয়াশা যেন চারদিকের পরিবেশকে দুর্ভেদ্য করে তুলেছে। পাহাড়ী ঝর্ণা ও আঁকাবাঁকা সরু পথ পেরিয়ে রাত ০৪০০ ঘটিকার দিকে ক্যাপ্টেন মঞ্জুর মোর্শেদ টহল দলটি নিয়ে এ্যামবুশ এলাকায় পৌঁছান। এ্যামবুশ এলাকায় পৌঁছানোর সাথে সাথে তিনি গাঁঢ় অন্ধকারেই টহল দলের সদস্যদের বিভিন্ন উপ-দলে ভাগ করে যার যার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে টার্গেটের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু শান্তিবাহিনীর আগমনের কোনো লক্ষণ নেই। এদিকে পূর্ব আকাশে তখন আলোর রেখা ফুটতে শুরু করেছে। হঠাৎ তিনি দেখেন এ্যামবুশ এলাকার পূর্ব দিক থেকে শান্তি বাহিনীর একটি দল এগিয়ে আসছে। তাৎক্ষণিক ক্যাপ্টেন মঞ্জুর মোর্শেদ চিন্তা করে দেখেন যে, এ্যামবুশ অপারেশন করলে শত্রুদের সম্পূর্ণভাবে ঘায়েল করা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই তিনি এ্যামবুশ না করে, শান্তি বাহিনীর টহলকে অনুসরণ করে ক্যাম্প পর্যন্ত গিয়ে রেইড পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সাথে থাকা ১০ জনকে দুই ভাগে ভাগ করেন। এক ভাগ বর্তমান এলাকায় পাহাড়ায় থাকবে। এতে যদি শান্তিবাহিনীর ক্যাম্পে অভিযান চলাকালে বাহির থেকে সহযোগিতা আসে তাহলে তারা প্রতিহত করতে পারে। অপরভাগ শান্তি বাহিনীর ক্যাম্পে রেইড পরিচালনা করবে।
শান্তিবাহিনী এ্যামবুশ এলাকা অতিক্রম করে গ্রামমুখী হওয়ার সাথে সাথে ক্যাপ্টেন মঞ্জুর মোর্শেদ ০৫ জনের ক্ষুদ্র দলটি নিয়ে অতি সতর্কতার সাথে তাদের পিছু নেন। শান্তিবাহিনীর সকলের হাতেই ছিল মারণাস্ত্র। বেশ কিছু পথ চলার পর একসময় সন্ত্রাসীরা একটি পাহাড়ী বাড়ির উঠানে প্রবেশ করে। রেইডের ক্ষুদ্র দলটি প্রায় নিঃশব্দে সন্ত্রাসীদের অনুসরণ করে ঐ বাড়ির সন্নিকটে চলে আসে। সে সময় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীরা ফায়ার করতে শুরু করে। পাল্টা জবাবে সেনাবাহিনীর অপারেশন দলের সদস্যরা গুলিবর্ষণ করতে করতে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায় এবং শান্তি বাহিনীর দুইজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী মৃত্যুবরণ করে। অন্যরা পাহাড় থেকে নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে পালিয়ে যায়। উক্ত অপারেশনে কয়েকটি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল উদ্ধার হয়।
পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ক্যাপ্টেন মঞ্জুর মোর্শেদ’কে দল অধিনায়ক হিসেবে অনুসরণীয় দক্ষতার জন্য বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন।
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

“বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডকে অধিদপ্তরে রুপান্তর করা হবে।” – উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বীর সেনানিদের বীরত্বগাঁথা-২৪

আপডেট সময় ০৪:৫৬:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে মেজর) এইচ এম মঞ্জুর মোর্শেদ, বীর প্রতীক, ই বেংগল (তৎকালীন ইউনিট ৫ ই বেংগল)
ক্যাপ্টেন এইচ এম মঞ্জুর মোর্শেদ, বীর প্রতীক, ই বেংগল পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩০৫ পদাতিক ব্রিগেডের আওতাধীন রাঙ্গামাটি রিজিয়ন এর ঘাগড়া জোনের ৫ ই বেংগল ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার অন্তর্গত কুতুকছড়ি আর্মি ক্যাম্পের কমান্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ তারিখ সকালে গোয়েন্দা সূত্রে তিনি সংবাদ পান যে, কিছুদিন ধরে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়ি ইউনিয়নের এক গ্রামে একদল শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসী ক্যাম্প স্থাপন করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানের পরিকল্পনা করছে। তিনি শান্তি বাহিনীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই তাদের সম্ভাব্য চলাচলের পথে এ্যামবুশ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন।
১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ তারিখ দিবাগত রাতে পরিকল্পনা মোতাবেক সন্ধ্যার পর অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কুতুকছড়ি ক্যাম্প থেকে ১০ জনের টহল দল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। অন্ধকার রাতে পথ চলা ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তীব্র অন্ধকারের পাশাপাশি শীতের ঘন কুয়াশা যেন চারদিকের পরিবেশকে দুর্ভেদ্য করে তুলেছে। পাহাড়ী ঝর্ণা ও আঁকাবাঁকা সরু পথ পেরিয়ে রাত ০৪০০ ঘটিকার দিকে ক্যাপ্টেন মঞ্জুর মোর্শেদ টহল দলটি নিয়ে এ্যামবুশ এলাকায় পৌঁছান। এ্যামবুশ এলাকায় পৌঁছানোর সাথে সাথে তিনি গাঁঢ় অন্ধকারেই টহল দলের সদস্যদের বিভিন্ন উপ-দলে ভাগ করে যার যার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে টার্গেটের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু শান্তিবাহিনীর আগমনের কোনো লক্ষণ নেই। এদিকে পূর্ব আকাশে তখন আলোর রেখা ফুটতে শুরু করেছে। হঠাৎ তিনি দেখেন এ্যামবুশ এলাকার পূর্ব দিক থেকে শান্তি বাহিনীর একটি দল এগিয়ে আসছে। তাৎক্ষণিক ক্যাপ্টেন মঞ্জুর মোর্শেদ চিন্তা করে দেখেন যে, এ্যামবুশ অপারেশন করলে শত্রুদের সম্পূর্ণভাবে ঘায়েল করা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই তিনি এ্যামবুশ না করে, শান্তি বাহিনীর টহলকে অনুসরণ করে ক্যাম্প পর্যন্ত গিয়ে রেইড পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সাথে থাকা ১০ জনকে দুই ভাগে ভাগ করেন। এক ভাগ বর্তমান এলাকায় পাহাড়ায় থাকবে। এতে যদি শান্তিবাহিনীর ক্যাম্পে অভিযান চলাকালে বাহির থেকে সহযোগিতা আসে তাহলে তারা প্রতিহত করতে পারে। অপরভাগ শান্তি বাহিনীর ক্যাম্পে রেইড পরিচালনা করবে।
শান্তিবাহিনী এ্যামবুশ এলাকা অতিক্রম করে গ্রামমুখী হওয়ার সাথে সাথে ক্যাপ্টেন মঞ্জুর মোর্শেদ ০৫ জনের ক্ষুদ্র দলটি নিয়ে অতি সতর্কতার সাথে তাদের পিছু নেন। শান্তিবাহিনীর সকলের হাতেই ছিল মারণাস্ত্র। বেশ কিছু পথ চলার পর একসময় সন্ত্রাসীরা একটি পাহাড়ী বাড়ির উঠানে প্রবেশ করে। রেইডের ক্ষুদ্র দলটি প্রায় নিঃশব্দে সন্ত্রাসীদের অনুসরণ করে ঐ বাড়ির সন্নিকটে চলে আসে। সে সময় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীরা ফায়ার করতে শুরু করে। পাল্টা জবাবে সেনাবাহিনীর অপারেশন দলের সদস্যরা গুলিবর্ষণ করতে করতে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায় এবং শান্তি বাহিনীর দুইজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী মৃত্যুবরণ করে। অন্যরা পাহাড় থেকে নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে পালিয়ে যায়। উক্ত অপারেশনে কয়েকটি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল উদ্ধার হয়।
পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ক্যাপ্টেন মঞ্জুর মোর্শেদ’কে দল অধিনায়ক হিসেবে অনুসরণীয় দক্ষতার জন্য বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন।