
নিউজ ডেস্ক: সূর্য একটা নিয়ম মেনে উদিত ও অস্ত যায়। চন্দ্রও একটা নিয়ম মেনে উদিত হয় সন্ধ্যাকাশে। নিয়মের ব্যত্যয়ে এই পৃথিবী না। সবকিছুই একটা নিয়ম মেনে চলে চলছে চলবে। প্রশিকা মানবিক সংস্থার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ও কবি রোকেয়া ইসলাম আপার সঙ্গে রয়েছে দীর্ঘ সখ্যতা। সেটিও সাহিত্যের কল্যাণে। সহসা এক বিকেলে আমরা কথা বললাম। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানুষ ও মানবিকতার জন্য কাজ করে চলেছেন। পাশাপাশি সাহিত্য তাঁর রক্তের শিরায় শিরায় সতত প্রবাহমান। Non Government organisations প্রশিকায় একটা সাহিত্য আড্ডা করতে চান। গতানুগতিকতার বাহিরে। এমন কথা শোনার পর মনে হলো আমরা আমাদের লিটল ম্যাগাজিন উদ্যান কে নিয়ে দেশ ও আন্তর্জাতিক আঙিনায় কাজ করছি, সেটিও গতানুগতিকতার বাহিরে গিয়ে। রোকেয়া আপার সঙ্গে কথা বললাম। আইডিয়া দিলাম। তিনি একবাক্যে সম্মতি দিলেন। জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আমি আবারও গেলাম প্রশিকার সদর দপ্তরের ১২ তলায়। এদিন প্রশিকার তিনজন প্রধান এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টরদের সঙ্গে মিটিং হলো রোকেয়া আপার মাধ্যমে। বিষয় ছিল সাহিত্য আড্ডার প্যাটার্ন নিয়ে। রাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতা এ বিষয়গুলো আড্ডায় স্থান পাবেনা আড্ডায়, আমরা কাজ করবো “দেশ কাল ঐতিহ্য ও শিকড়ের সঙ্গে পদচারণা “…. এই শ্লোগান সামনে রেখে। তাঁরা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে বিষয় টা শুনলেন এবং সন্তুষ্ট হলেন। প্রতিমাসে একবার সাহিত্য আড্ডার স্থান ও এন্টারটেইনিং এর ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করলেন। আটতলা থেকে আবার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলাম আপার বারো তলার কামরায়।
শুরু হলো ২২ মে বৃহস্পতিবার : গন্তব্য বহুদূর
আটাশ বছর ধরে উদ্যান লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করছি। শিল্পের জন্য কোনো কাজ করতে গেলে আপোষ করিনি কখনো।শতভাগ উজাড় করে কাজ করার চেষ্টা করেছি। টীম উদ্যানের সঙ্গে মিটিং করলাম। নির্বাহী সম্পাদক হাসানূর রহমান সুমন ও সহকারী সম্পাদক মাহবুব সেতুর সঙ্গে। আমাদের করণীয় নির্ধারণ করে ফেললাম। ব্যানার তৈরি করে প্রশিকার এপ্রুভাল নেয়া হলো।
২২ মে বিকেলটা অন্য সাজে সজ্জিত হয়ে গেলো। জ্যামের নগরীতে বৃহস্পতিবার সবাই ছুটে চলে নাড়ির টানে বাড়ির পথে।জ্যাম পরিণত হয় মহা জ্যামে। আমন্ত্রিত লেখক কবিরা সময়মতো আসতে লাগলেন। তাঁদের ডেডিকেশন দেখে মনের জোর তিনগুণ বেড়ে গেলো। সবার আগে উপস্থিত হয়েছেন আদাবর থেকে কবি চরু হক। এরপর মতিঝিল থেকে কবি মাহফুজা অনন্যা, শান্তিনগর থেকে কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোন থেকে আবৃত্তি শিল্পী অনন্যা মাহমুদ, ধানমন্ডি থেকে কবি তাহমিনা কোরাইশি, মিরপুর থেকে কবি মুসতারি বেগম, উত্তরা থেকে কবি নিলুফা জামান, বনশ্রী থেকে কবি মোসতাক মুকুল, মোহাম্মদপুর থেকে লাবনী মন্ডল, আরিফ নজরুল, মাহবুব সেতু, সৈয়দা শাহিদা সুলতানা ইলোরা, নাদিব রহমান অর্ক, কবিতা কস্তা, মগবাজার দিলু রোড থেকে কবি শেলী সেনগুপ্তা, আবদুস সালাম, মিরপুর থেকে কবি ফারুক মাহমুদ ও ইমরোজ সোহেল।
কি হলো প্রথম পর্বে:
মাগরিবের আজানের সুলোলিত ধ্বনি শেষে নির্ধারিত সময়ের একঘন্টা পর প্রথম অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দিলেন প্রশিকার নির্বাহী পরিচালক মি: আবদুল হাকিম। এরপর চমৎকার কন্ঠে সূচনা সঙ্গীত পরিবেশন করেন কবি কথাশিল্পী ও কণ্ঠশিল্পী এবং ধানমন্ডি সাহিত্য আড্ডার কর্ণধার নূর কামরুননাহার। সুরের রেশ ছড়িয়ে পড়লো, এরমধ্যেই প্রথম অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত আবৃত্তি শিল্পী অনন্যা মাহমুদ অসাধারণ উচ্চারণে আড্ডার কবি গোলাম কিবরিয়া পিনুর একটি কবিতা পাঠ করেন। তারপর জাতীয় জাগরণের কবি, মানবতার কবি, প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতার অংশ বিশেষ পাঠ করে সবাইকে বিমোহিত করে দেন। গান ও আবৃত্তির রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হলো আড্ডার কবি গোলাম কিবরিয়া পিনুর স্বকন্ঠে কবিতা পাঠ। পিন পতন নিররতায় তন্ময় হয়ে সকলে শুনলেন গোলাম কিবরিয়া পিনুর কবিতা। কবিতা পাঠ শেষে চারজন আলোচক কবির সামনেই কবিতা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা ও প্রশংসার বন্যা বইয়ে দিলেন। কবি অরবিন্দ চক্রবর্তী কথা বললেন চার মিনিট আটচল্লিশ সেকেন্ড, লাবনী মন্ডল কথা বললেন চার মিনিট বাহান্ন সেকেন্ড, কবি নূর কামরুন নাহার কথা বললেন পাঁচ মিনিট ছাপ্পান্ন সেকেন্ড এবং কবি মাহফুজা অনন্যা কথা বললেন নয় মিনিট আঠারো সেকেন্ড। কবির সামনে কবিতার আলোচনা ও সমালোচনা উপস্থিত সকলেই দারুণভাবে গ্রহণ করলেন। এরপরই শুরু হলো আমন্ত্রিত কবিদের কবিতা পাঠ। কবিতা পাঠ করলেন: কবি ফারুক মাহমুদ, কবি সানাউল হক, কবি তাহমিনা কোরাইশি, কবি নাহার আহমেদ, কবি আরিফ নজরুল, কবি আইরিন সুলতানা, কবি শেলী সেনগুপ্তা, কবি চরু হক, কবি মাহফুজা অনন্যা, কবি মোসতাক মুকুল, কবি কবিতা কস্তা, কবি শাহিদা সুলতানা ইলোরা, কবি মুসতারি বেগম, কবি নিলুফা জামান।
সাহিত্যের জন্য দু’ঘন্টা এগারো মিনিট কিভাবে কেটে গেলো আগত আর্টিস্টরা কেউই বুঝতে পারেননি। একটা ভালোলাগাময় সন্ধ্যা কখন রাতের চাদরে আবৃত হয়েছে এটা বুঝতে পারা গেলো সভাপতি কবি রোকেয়া ইসলাম সমাপনী বক্তব্য দেয়ার জন্য হাসিমুখে দাঁড়ালেন। তাঁর বক্তব্যের পর পরই কবিদের সম্মানে প্রশিকা ডিনারের আয়োজন করে, যা প্রশংসায় ভাসিয়েছেন কবি বৃন্দ।
ও হ্যাঁ আর একটি বিষয়, সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন উদ্যান লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও কবি তৌফিক জহুর। এবং উদ্যান লিটল ম্যাগাজিনের অনলাইন টেলিভিশন উদ্যানে তা সম্প্রচার করেছেন উদ্যান লিটল ম্যাগাজিনের সহকারী সম্পাদক মাহবুব সেতু।
আগামীতে নতুন আর একটা জম্পেশ আড্ডা নিয়ে আসছি…. আপাতত অপেক্ষা….