
আলী আহসান রবি: তারিখঃ ০৯ মে, ২০২৫ইং বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতির উদ্যোগে কনকর্ড হেলথ গ্রুপ এবং কনকর্ড ডায়াগনস্টিক মলিকিউলার ল্যাবের সহযোগিতায় বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস ২০২৫ উপলক্ষে “থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঃ বাংলাদেশ প্রেক্ষিত” ৯ মে ২০২৫ রোজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টায় কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারি (প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা) জনাব অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সায়েদুর রহমান।
এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব, জনাব মোঃ সায়েদুর রহমান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবু জাফর। এছাড়া আরও মঞ্চে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতির সম্মানিত উপদেষ্টা ও প্রাক্তন মন্ত্রী সৈয়দ দীদার বখত, কনকর্ড হেলথ কেয়ার গ্রুপের গ্রুপ চেয়ারম্যান মোঃ ফাইজুর রহমান। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ আলোচনা করেন বাংলাদেশ থ্যালসেমিয়া সমিতির উপদেষ্টা ও রক্ত রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ এম এ খান এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মাফরুহা আক্তার। উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতির সভাপতি ড. এম এ মতিন। অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কনকর্ড হেলথ কেয়ার গ্রুপের গ্রুপ চেয়ারম্যান মোঃ ফাইজুর রহমান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি ডাঃ জাহিদুল ইসলাম সরকারের কাছে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের পরিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে কর্মক্ষম নাগরিক হিসেবে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহনের জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। আর থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও হাসপাতালের পক্ষে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের পরিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ও রোগটি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সুপারিশমালা বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ডাঃ এ কে এম একরামুল হোসেন স্বপন আমন্ত্রিত অতিথি ও সরকারের নীতি নির্ধারকের কাছে পেশ করেন। কনকর্ড হেলথ কেয়ার গ্রুপ এবং কনকর্ড ডায়াগনস্টিক ও মলিকিউলার ল্যাবের কার্যকর্ম উপস্থাপন করেন ডাঃ ফারাহ-সুল-লাইল ও ড. নাজমুল হক।
জনস্বাস্থ্য প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য থ্যালাসিমিয়া একটি গুরুতর সমস্যা। এটি মূলত জীনগত ও জন্মগত একটি রক্তশূন্যতাজনিত রোগ। আক্রান্ত রোগীদের সারাজীবন চিকিৎসার উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। যেমন বারবার রক্ত পরিসঞ্চালন করা, আয়রন কমানোর ঔষধ সেবন ইত্যাদি। সামষ্টিক চিকিৎসা ব্যায় অনেক বেশি। যেহেতু বংশগত রোগ তাই পিতা ও মাতা উভয়েই যদি থ্যালাসিমিয়ার বাহক হন তবে অনাগত সন্তানের থ্যালাসিমিয়া রোগ হতে পারে। উল্লেখ্য যে বাহকের নিজের তেমন কোন শারিরীক সমস্যা থাকে না। তাই বাহক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মানুষ অসচেতন ও উদাসীন থাকে। অথচ রক্তের হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই বাহক নির্ণয় করা যায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি দেশ ব্যাপী জাতীয় থ্যালসেমিয়া জরিপ পরিচালনা করে, যেখানে দেখা যায় দেশে শতকরা ১১.৫ ভাগ মানুষ থ্যালাসেমিয়া এবং হিমোগ্লোবিন-ই রোগের বাহক অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ কোটি মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের জীন বহন করছে। বাংলাদেশে এখন এই রোগের রোগীদের সঠিক কোন তথ্য উপাত্ত নেই তবে বিভিন্ন গবেষণা হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা যায় দেশে প্রতি বছর ১০০০০-১৫০০০ শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে এবং বর্তমানে প্রায় লক্ষ্যাধিক রোগী রয়েছে এবং এর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
থ্যালাসেমিয়া মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। বিবাহের আগে প্রত্যেক তরুণ তরুণীর রক্তের একটি পরীক্ষা (হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরসিস) করে জেনে নিতে হবে সে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক কিনা?
এই বাহক নির্ণয়ের পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য দেশে পর্যাপ্ত ও উন্নত মানের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষকে সচেতন এবং থ্যালাসেমিয়া রোগীদের যথাপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা যাতে নিশ্চিত করা হয় এই লক্ষ্যে এই বছরের প্রতিপাদ্য- “থ্যালাসেমিয়ার জন্য সামাজিক ঐক্য গড়ি রোগীদের অধিকার নিশ্চিত করি”
এখনি সময় এই রোগ নিয়ে সকল মহলের যথাপযুক্ত উদোগ্য গ্রহণ করতে হবে এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় থ্যালাসেমিয়া মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।