
ডেস্ক রিপোর্ট: সুনামগঞ্জের ছাতকে ১৩ বছরের কিশোর মোঃ কামিল আলীকে ২০ বছরের যুবক সাজিয়ে মিথ্যা চুরির মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে ছাতক থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় একটি ব্যবসায়ী চক্রের নির্মম শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় এই শিশু। পুরো ঘটনার বিচারিক পর্যবেক্ষণে আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন এবং তার চিকিৎসা ও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার আকিলপুর গ্রামের কামিল আলী দীর্ঘদিন ধরে ছাতক পৌর শহরের ব্যবসায়ী রমিজ আলীর দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। অভিযোগ রয়েছে, ওই ব্যবসায়ী ও তার পরিবারের সদস্যরা সবজি ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা ও মদ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। একপর্যায়ে কিশোর কামিল মাদকের একটি কার্টুন রাস্তায় ফেলে দিলে ঘটনাটি প্রকাশ পায়। এরপর দোকানের মালিক রমিজ আলী তাকে টাকার লোভ দেখিয়ে বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন। কামিল রাজি না হওয়ায় সে চাকরি ছেড়ে বাড়ি ফিরে যায়।
পরবর্তীতে দোকান মালিক কামিলের পরিবারকে প্রভাবিত করে তাকে পুনরায় দোকানে ফিরিয়ে আনেন। ৩০ জুন সকাল ৮টার দিকে রমিজ আলী ও তার ছেলেরা কামিলকে নির্মমভাবে মারধর করে তিনতলা বিল্ডিং থেকে নিচে ফেলে দেয় এবং পরে কাদা থেকে তুলে আবারও শারীরিক নির্যাতন চালায়। এ সময় তার কান ও নাকের লতি ছিঁড়ে ফেলার মতো ভয়াবহ নিপীড়ন করা হয়।
ঘটনা আড়াল করতে রমিজ আলীর ছেলে মোস্তাকীম আলীকে বাদী করে ছাতক থানায় একটি মিথ্যা চুরির মামলা (মামলা নং-০১, জিআর-১৮৯/২৫, ধারা ৩৮০) দায়ের করা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুযায়ী, পুলিশ মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে কামিলের প্রকৃত বয়স গোপন রেখে তাকে ২০ বছর বয়সী যুবক দেখিয়ে কোর্টে চালান করে।
১ জুলাই মামলাটি শিশু আদালতে উপস্থাপন করা হলে, জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ শিশুটিকে জামিন মঞ্জুর করেন এবং বলেন, শিশুকে মারধর করা ফৌজদারি অপরাধ। অভিযুক্তদের খুঁজে বের করতে এবং দোষীদের চিহ্নিত করতে সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল), ছাতককে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীরা বলেন, শিশু কামিলকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তা এতটাই অমানবিক যে সে ঘটনাস্থলেই প্রস্রাব-পায়খানা করে দেয়। তারা দোষী ব্যবসায়ী পরিবার ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ছাতক থানার এসআই গাজী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “আমি কিছুই জানি না, শুধু এফআইআরে আমার নাম রয়েছে।” থানার ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, “এসআই গাজী সব বলতে পারবে।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দিরাই সার্কেল) মোঃ শরিফুল হক জানান, আদালতের নির্দেশে তিনি ঘটনাস্থলে তদন্ত করেছেন, তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।
এই ঘটনায় শিশু নির্যাতন ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রশাসন কি সত্যিকারের ব্যবস্থা নেবে, নাকি বরাবরের মতোই দায়সারা প্রতিবেদনেই ঘটনাটি চাপা পড়ে যাবে