ঢাকা ০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে’ জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ Logo আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন ও ছাত্র জনতার বিজয়ের বর্ষপূর্তি উদযাপনে নবাবগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদল Logo আগামী নির্বাচন নিয়ে যা বললেন— প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। Logo মধ্যনগরে জামায়াতে ইসলামি ও ইসলামী আন্দোলনের যৌথ উদ্যোগে ৩৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালিত Logo জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান দিবসে মধ্যনগরে র‌্যালি ও আলোচনা Logo জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত Logo কালিগঞ্জে জামায়াতের গণ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত Logo কালিগঞ্জে বিএনপির উদ্যোগে গণঅভ্যুত্থান দিবসে বর্ণাঢ্য র‍্যালী ও সমাবেশ অনুৃষ্ঠিত Logo জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে দেশে জনগণের শাসন ফিরিয়ে এনেছে Logo জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের অগ্রগতি পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা

বাগমারায় সাব্বির ক্লিনিক এ অতিরিক্ত বিল নেয়ার অভিযোগ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:৪৭:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫
  • ৫৩৬ বার পড়া হয়েছে

মো: গোলাম কিবরিয়া

রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি

অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করতে না পারায় রাজশাহীর বাগমারার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চার দিন আটকে রাখা হয়েছিল এক রোগীকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার পর পুলিশের হস্তক্ষেপে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে ওই রোগীকে বাড়ি নিয়ে যান স্বজনেরা।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার ‘ডা. সাব্বির ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক’ এ। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর কাছ থেকে ৬৭ হাজার ৭২০ টাকার বিল দাবি করে। টাকা দিতে না পারায় রোগীকে আটকে রাখেন তাঁরা। এই ক্লিনিকটির পরিচালক সাব্বির হোসেন। তিনি উপজেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন এস আই এম রাজিউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই বিল অস্বাভাবিক। আমি হাসপাতালের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখব।’

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ জুলাই পাশের দুর্গাপুর উপজেলার কয়ামাজমপুর গ্রামের বাসিন্দা সুশান্ত (৫০) পারিবারিক বিরোধের জেরে বিষপান করেন। পরে পরিবারের লোকজন তাঁকে তাহেরপুরের হরিতালা এলাকার ওই ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে রোগীকে ওয়াশ করে বিষ বের করে চিকিৎসকেরা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখেন। দুই দিন পর ২৮ জুলাই রোগীকে বাড়ি নিতে গেলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায়। জানানো হয়, আরও দুই দিন পর ছাড়পত্র দেওয়া হবে। পরে ৩০ জুলাই আবার রোগীর অভিভাবকেরা গেলে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ৬৭ হাজার ৭২০ টাকার বিল। জানানো হয়, টাকা না দিলে রোগীকে ছাড়া হবে না। তখন থেকেই রোগী সেখানে ‘আটকে’ ছিলেন।

রোগীর ছোট ভাই সঞ্জয় কুমার  বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ দাদা, ঠিকমতো খাবারই পাই না। কয়েক দিন ধরে ভাইকে আটকে রেখে ৬৭ হাজার টাকা দাবি করছে। হাতে পায়ে ধরে পাঁচ হাজার টাকা কমিয়েছে। এতো টাকা দিমু কি ভাবে ?? তিনি বলেন, টাকা দিতে না পারায় তাঁর ভাইকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছিল না।

রোগীর প্রতিবেশী আশরাফুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে ঘটনাটি তুলে ধরেন। তিনি নিজেও রোগীকে ছাড়াতে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। অভিযোগ করেন, তিনি প্রতিবাদ করলেও স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের হুমকি ও ভয়ভীতির কারণে পারেননি। পোস্টে অনেকেই ক্লিনিকের অতিরিক্ত বিল আদায়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন এবং শাস্তির দাবি জানান।

রোগীর হাতে ধরিয়ে দেওয়া বিলের কপি থেকে দেখা যায়, বিষ ওয়াশ বাবদ দাবি করা হয়েছে ১৯ হাজার টাকা, চার দিনের ওষুধের বিল ১৯ হাজার ৮২০ টাকা, অস্ত্রোপচার কক্ষ ব্যবহারের বিল ৯ হাজার টাকা। আরও কিছু ‘অস্বাভাবিক’ খাতেও বিল করা হয়েছে।

তিনজন চিকিৎসক ও চারজন ক্লিনিক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমন রোগীর চিকিৎসায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি বিল হওয়ার কথা নয়। এক চিকিৎসকের ভাষায়, ‘তিনি কেন এত বেশি বিল করলেন, তা বোধগম্য নয়।’

ঘটনার বিষয়ে জানার জন্য ক্লিনিকের পরিচালক সাব্বির হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও যোগাযোগ করা যায়নি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। তবে ক্লিনিকের চিকিৎসক আবদুস সাত্তার রোগী আটকে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বিলটি অস্বাভাবিক ছিল না। ‘আমরা অতিরিক্ত বিল করি না, ’

স্থানীয় সাংবাদিকেরা বিষয়টি জানার পর পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। তাহেরপুর তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা বলেন, ‘উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে সুরাহা করেছি।’ রোগীর প্রতিবেশী আজাদ হোসেন বলেন, ‘রোগী আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তাই টাকাপয়সা তুলে তাঁকে মুক্ত করে এনেছি।’ এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে ।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

৫ আগস্ট ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে’ জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ

বাগমারায় সাব্বির ক্লিনিক এ অতিরিক্ত বিল নেয়ার অভিযোগ

আপডেট সময় ০১:৪৭:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

মো: গোলাম কিবরিয়া

রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি

অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করতে না পারায় রাজশাহীর বাগমারার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চার দিন আটকে রাখা হয়েছিল এক রোগীকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার পর পুলিশের হস্তক্ষেপে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে ওই রোগীকে বাড়ি নিয়ে যান স্বজনেরা।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার ‘ডা. সাব্বির ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক’ এ। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর কাছ থেকে ৬৭ হাজার ৭২০ টাকার বিল দাবি করে। টাকা দিতে না পারায় রোগীকে আটকে রাখেন তাঁরা। এই ক্লিনিকটির পরিচালক সাব্বির হোসেন। তিনি উপজেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন এস আই এম রাজিউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই বিল অস্বাভাবিক। আমি হাসপাতালের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখব।’

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ জুলাই পাশের দুর্গাপুর উপজেলার কয়ামাজমপুর গ্রামের বাসিন্দা সুশান্ত (৫০) পারিবারিক বিরোধের জেরে বিষপান করেন। পরে পরিবারের লোকজন তাঁকে তাহেরপুরের হরিতালা এলাকার ওই ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে রোগীকে ওয়াশ করে বিষ বের করে চিকিৎসকেরা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখেন। দুই দিন পর ২৮ জুলাই রোগীকে বাড়ি নিতে গেলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায়। জানানো হয়, আরও দুই দিন পর ছাড়পত্র দেওয়া হবে। পরে ৩০ জুলাই আবার রোগীর অভিভাবকেরা গেলে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ৬৭ হাজার ৭২০ টাকার বিল। জানানো হয়, টাকা না দিলে রোগীকে ছাড়া হবে না। তখন থেকেই রোগী সেখানে ‘আটকে’ ছিলেন।

রোগীর ছোট ভাই সঞ্জয় কুমার  বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ দাদা, ঠিকমতো খাবারই পাই না। কয়েক দিন ধরে ভাইকে আটকে রেখে ৬৭ হাজার টাকা দাবি করছে। হাতে পায়ে ধরে পাঁচ হাজার টাকা কমিয়েছে। এতো টাকা দিমু কি ভাবে ?? তিনি বলেন, টাকা দিতে না পারায় তাঁর ভাইকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছিল না।

রোগীর প্রতিবেশী আশরাফুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে ঘটনাটি তুলে ধরেন। তিনি নিজেও রোগীকে ছাড়াতে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। অভিযোগ করেন, তিনি প্রতিবাদ করলেও স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের হুমকি ও ভয়ভীতির কারণে পারেননি। পোস্টে অনেকেই ক্লিনিকের অতিরিক্ত বিল আদায়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন এবং শাস্তির দাবি জানান।

রোগীর হাতে ধরিয়ে দেওয়া বিলের কপি থেকে দেখা যায়, বিষ ওয়াশ বাবদ দাবি করা হয়েছে ১৯ হাজার টাকা, চার দিনের ওষুধের বিল ১৯ হাজার ৮২০ টাকা, অস্ত্রোপচার কক্ষ ব্যবহারের বিল ৯ হাজার টাকা। আরও কিছু ‘অস্বাভাবিক’ খাতেও বিল করা হয়েছে।

তিনজন চিকিৎসক ও চারজন ক্লিনিক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমন রোগীর চিকিৎসায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি বিল হওয়ার কথা নয়। এক চিকিৎসকের ভাষায়, ‘তিনি কেন এত বেশি বিল করলেন, তা বোধগম্য নয়।’

ঘটনার বিষয়ে জানার জন্য ক্লিনিকের পরিচালক সাব্বির হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও যোগাযোগ করা যায়নি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। তবে ক্লিনিকের চিকিৎসক আবদুস সাত্তার রোগী আটকে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বিলটি অস্বাভাবিক ছিল না। ‘আমরা অতিরিক্ত বিল করি না, ’

স্থানীয় সাংবাদিকেরা বিষয়টি জানার পর পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। তাহেরপুর তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা বলেন, ‘উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে সুরাহা করেছি।’ রোগীর প্রতিবেশী আজাদ হোসেন বলেন, ‘রোগী আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তাই টাকাপয়সা তুলে তাঁকে মুক্ত করে এনেছি।’ এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে ।