ঢাকা ০২:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo জনগণের নিকট দায়বদ্ধতা না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অর্থহীন : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা Logo ঈদযাত্রা নিরাপদ, নির্বিঘ্ন ও স্বস্তিদায়ক করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে- মোঃ এহছানুল হক Logo বিশেষ অভিযানে ছিনতাইকারী, মাদক কারবারিসহ ৭১ জনকে গ্রেফতার Logo তিন পেশাদার ছিনতাইকারী ও মাদক কারবারিকে দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার Logo নওগাঁয় ১১৯ কেজি গাঁজাসহ ৬ মাদক কারবারি গ্রেফতার Logo সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি Logo এনসিপির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা Logo প্রধান উপদেষ্টার কাছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর Logo ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে নওগাঁয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ Logo গণহত্যার বছর না ঘুরতেই আ. লীগকে ফেরানোর খায়েশ বিপজ্জনক: আসিফ মাহমুদ

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বীর সেনানিদের বীরত্বগাঁথা-২১

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:০১:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৫৫৯ বার পড়া হয়েছে
সিপাহী (পরবর্তীতে সৈনিক) মোঃ জমির উদ্দিন, বীর প্রতীক, ই বেংগল (তৎকালীন ইউনিট ৩২ ই বেংগল)
সিপাহী মোঃ জমির উদ্দিন, বীর প্রতীক, ই বেংগল পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারাতে ৩২ ই বেংগল এ কর্মরত ছিলেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৩২ ই বেংগল জানতে পারে যে, ছেংদং এলাকায় শান্তিবাহিনীর একটি গুপ্তাশ্রয় রয়েছে, যেখান থেকে তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত এলাকায় অপারেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৮ জুলাই ১৯৮৯ তারিখে মেজর সৈয়দ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে রাত ২০০০ ঘটিকায় ৩০ জনের একটি পেট্রোল দল গুইমারা হেডকোয়ার্টার থেকে ওইমারা বাজার হয়ে ছেংদং এলাকার উদ্দেশ্যে পূর্ব দিকে রওনা করে। সে সময় বর্ষাকাল হওয়ায় প্রবল ঝড়-তুফান হচ্ছিল। ভয়ংকর নিস্তব্ধ পাহাড়ি রাস্তা, সাথে প্রচন্ড ঝড়ের দাপটে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে এলাকাটি। রাত ০৩০০ ঘটিকার সময় দুর্গম ছেংদং এলাকার একটি পাহাড়ে তারা অবস্থান গ্রহণ করে এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে সতর্কভাবে পজিশন নেয়। সিপাহী জমির উদ্দিন, সুবেদার চেরাগ আলী এবং সিপাহী মুক্তার আলী একটি উঁচু টিলায় অবস্থান গ্রহণ করে। ১৯ জুলাই ১৯৮৯ তারিখ ভোরে সিপাহী জমির উদ্দিন উঁচু টিলা থেকে একটি খড়ের তৈরি ঘর দেখতে পায়। ঘরটি দেখা মাত্রই সে সুবেদার চেরাগ আলীকে বলে, “ঘরটি আমি কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করতে চাই”। সুবেদার চেরাগ আলী অনুমতি দিলে সিপাহী জমির উদ্দিন ঘরটির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মই দিয়ে উপরে উঠা মাত্রই সিপাহী জমির উদ্দিন এর সামনে এক মহিলার আগমন ঘটে। সিপাহী জমির উদ্দিন তার কাছে শান্তিবাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিউত্তরে সে জানালো এখানে কোন শান্তিবাহিনী নেই। তখন ঘরের ভিতর হতে একটি আওয়াজ ভেসে আসে, তার কাছে মনে হয় যেন ঘরের পিছনের দিক দিয়ে কেউ পালিয়ে যাচ্ছে। সিপাহী জমির উদ্দিন তড়িৎ গতিতে ঘর থেকে নেমে সন্ত্রাসীদের পিছনে ধাওয়া করে। সিপাহী জমিরের উপস্থিতি টের পেয়ে শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীরা তার দিকে গুলিবর্ষন শুরু করে। তৎক্ষনাৎ সেও শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীদের দিকে গুলি ছুঁড়তে থাকে। তাদের কাছাকাছি যাওয়া মাত্রই সিপাহী জমির উদ্দিনের রাইফেল ফায়ারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে সিপাহী জমির রাইফেলের বেয়নেট দ্বারা শত্রুর এলএমজি ম্যান দ্বয়কে আঘাত করে। এলএমজি ম্যান-১ এবং এলএমজি ম্যান-২ গুরুতর আহত হয়ে পাহাড়ের নিচে ঝাঁপিয়ে পরে। সিপাহী জমির তার অস্ত্র ফেলে দিয়ে শত্রুর ৭.৬২ মিঃমিঃ চাইনিজ এলএমজিটি হস্তগত করে এবং বিদ্যুতের গতিতে সন্ত্রাসীদের এলএমজি দিয়েই তাদের দিকে অনবরত গুলিবর্ষন শুরু করে। উভয় পক্ষের মধ্যে বেশ কিছু সময় ধরে গোলাগুলির পর পরিবেশ শান্ত হয়ে উঠে। এ সময় সিপাহী জমির বুঝতে পারে যে, তার মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছে। এলএমজি ম্যানদ্বয়ের সাথে প্রচন্ড ধস্তাধস্তিতে সিপাহী জমির উদ্দিন গুরুতর আহত হয়। পরবর্তীতে অপারেশন দলের সবাই একত্রিত হয় এবং গুইমারার দিকে প্রস্থান করে।
এই অপারেশনে সিপাহী জমির উদ্দিনকে অসীম সাহসিকতা এবং বীরত্বের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে।
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জনগণের নিকট দায়বদ্ধতা না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অর্থহীন : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বীর সেনানিদের বীরত্বগাঁথা-২১

আপডেট সময় ০৫:০১:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
সিপাহী (পরবর্তীতে সৈনিক) মোঃ জমির উদ্দিন, বীর প্রতীক, ই বেংগল (তৎকালীন ইউনিট ৩২ ই বেংগল)
সিপাহী মোঃ জমির উদ্দিন, বীর প্রতীক, ই বেংগল পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারাতে ৩২ ই বেংগল এ কর্মরত ছিলেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৩২ ই বেংগল জানতে পারে যে, ছেংদং এলাকায় শান্তিবাহিনীর একটি গুপ্তাশ্রয় রয়েছে, যেখান থেকে তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত এলাকায় অপারেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৮ জুলাই ১৯৮৯ তারিখে মেজর সৈয়দ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে রাত ২০০০ ঘটিকায় ৩০ জনের একটি পেট্রোল দল গুইমারা হেডকোয়ার্টার থেকে ওইমারা বাজার হয়ে ছেংদং এলাকার উদ্দেশ্যে পূর্ব দিকে রওনা করে। সে সময় বর্ষাকাল হওয়ায় প্রবল ঝড়-তুফান হচ্ছিল। ভয়ংকর নিস্তব্ধ পাহাড়ি রাস্তা, সাথে প্রচন্ড ঝড়ের দাপটে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে এলাকাটি। রাত ০৩০০ ঘটিকার সময় দুর্গম ছেংদং এলাকার একটি পাহাড়ে তারা অবস্থান গ্রহণ করে এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে সতর্কভাবে পজিশন নেয়। সিপাহী জমির উদ্দিন, সুবেদার চেরাগ আলী এবং সিপাহী মুক্তার আলী একটি উঁচু টিলায় অবস্থান গ্রহণ করে। ১৯ জুলাই ১৯৮৯ তারিখ ভোরে সিপাহী জমির উদ্দিন উঁচু টিলা থেকে একটি খড়ের তৈরি ঘর দেখতে পায়। ঘরটি দেখা মাত্রই সে সুবেদার চেরাগ আলীকে বলে, “ঘরটি আমি কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করতে চাই”। সুবেদার চেরাগ আলী অনুমতি দিলে সিপাহী জমির উদ্দিন ঘরটির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মই দিয়ে উপরে উঠা মাত্রই সিপাহী জমির উদ্দিন এর সামনে এক মহিলার আগমন ঘটে। সিপাহী জমির উদ্দিন তার কাছে শান্তিবাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিউত্তরে সে জানালো এখানে কোন শান্তিবাহিনী নেই। তখন ঘরের ভিতর হতে একটি আওয়াজ ভেসে আসে, তার কাছে মনে হয় যেন ঘরের পিছনের দিক দিয়ে কেউ পালিয়ে যাচ্ছে। সিপাহী জমির উদ্দিন তড়িৎ গতিতে ঘর থেকে নেমে সন্ত্রাসীদের পিছনে ধাওয়া করে। সিপাহী জমিরের উপস্থিতি টের পেয়ে শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীরা তার দিকে গুলিবর্ষন শুরু করে। তৎক্ষনাৎ সেও শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীদের দিকে গুলি ছুঁড়তে থাকে। তাদের কাছাকাছি যাওয়া মাত্রই সিপাহী জমির উদ্দিনের রাইফেল ফায়ারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে সিপাহী জমির রাইফেলের বেয়নেট দ্বারা শত্রুর এলএমজি ম্যান দ্বয়কে আঘাত করে। এলএমজি ম্যান-১ এবং এলএমজি ম্যান-২ গুরুতর আহত হয়ে পাহাড়ের নিচে ঝাঁপিয়ে পরে। সিপাহী জমির তার অস্ত্র ফেলে দিয়ে শত্রুর ৭.৬২ মিঃমিঃ চাইনিজ এলএমজিটি হস্তগত করে এবং বিদ্যুতের গতিতে সন্ত্রাসীদের এলএমজি দিয়েই তাদের দিকে অনবরত গুলিবর্ষন শুরু করে। উভয় পক্ষের মধ্যে বেশ কিছু সময় ধরে গোলাগুলির পর পরিবেশ শান্ত হয়ে উঠে। এ সময় সিপাহী জমির বুঝতে পারে যে, তার মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছে। এলএমজি ম্যানদ্বয়ের সাথে প্রচন্ড ধস্তাধস্তিতে সিপাহী জমির উদ্দিন গুরুতর আহত হয়। পরবর্তীতে অপারেশন দলের সবাই একত্রিত হয় এবং গুইমারার দিকে প্রস্থান করে।
এই অপারেশনে সিপাহী জমির উদ্দিনকে অসীম সাহসিকতা এবং বীরত্বের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে।