
আলী আহসান রবি: ০৮ মে, ২০২৫ দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরুত্তার লক্ষো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেড়িয়ে অতিদ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রুপান্তর হওয়া প্রয়োজন। নতুবা দিনদিন বিদ্যুৎ জ্বালানির এই সংকট বাড়তেই থাকবে। বৃহস্পতিবার (৮ মে। জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত জ্বালানি রুপান্তর বিষয়ক এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। জ্বালানি সুবিচারে বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি ২০২৪ (ক্যাব প্রভাবিত)’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ভোক্তা অধিকার নিয়ে করায় করা নাগরিক সংগঠন
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ক্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজুর উপস্থাপনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যাবের কো-অর্ডিনেটর প্রকৌশলী শুভ কিবরিয়া। তিনি বলেন জীবাশ্ম জ্বালানি (তেল, গ্যাস, কয়লা) থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে (সোলার, পানি বা বায়ু বিদ্যুৎ। যাওয়ার নামই জ্বালানি রূপান্তর। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির দিকে যাওয়া নয়। আমরা একটি সুন্দর বাসস্থানের জন্য ৬টি এনার্জি তথা জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ক্লিন এনার্জি তথ্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যেতে চাই। কিন্তু সরকারের মধ্যে এই স্বদিচ্ছার কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন যান বলেন, আমরা জানি, বাংলাদেশের চেয়ে কেনিয়ার মতো দেশও জ্বালানি রূপান্তরের বিষয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে তারা জ্বালানি রূপান্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির দিকে না ঝুঁকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে রয়েছে। কারণ তারা জানে বাসযোগ্য পৃথিবীর জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকল্প নেই। অথচ বাংলাদেশ অনুসরণ করছে পাকিস্তানের মতো দেশের সাথে। কারণ পাকিস্তানে বাংলাদেশের মতো জ্বালানি রুপান্তর নিয়ে ভাবনা নেই।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ফার্নেস অয়েল বা কয়লার ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এইগুলো আমদানীর ক্ষেত্রে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে সহজেই (সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা) অর্থ বিদেশে নেয়া গেছে। আমরা চাই এই বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে সরকার পদক্ষেপ নেব্যে
প্রান্তজন এর নির্বাহী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম বলেন বরিশাল এলাকায় (জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক। পাওয়ার প্লান্টগুলোতে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় আমরা পটুয়াখালির পায়রা এলএনজি পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও সেটা বাতিল হয়নি। অথচ এগুলো এক একটি কার্বন বোমা, যা পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করছে। একশনএইড বাংলাদেশ এর বলেন, গ্রীণ সোসাইটি তৈরির লক্ষ্যে যুবসমাজকে সচেতন করার
জনা ক্যাবের সাথে সাথে কাজ কা করছে একশন এইড। কারণ একটি পরিবেশবান্ধব পৃথিবীর পৃথি জন্য জ্বালানি রুপান্তর ঘুবই প্রয়োজন। আর এই রুপান্তর প্রক্রিয়ায় যুব সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। আমরা চাই- সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জ্বালানির রূপান্তর প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমাসীর কবির বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও এষ্ট্র এখনো জ্বালানি বা পরিবেশের জন্য একটি কাঠামো তৈরি করতে পারে নাই। এটা অবশ্যই সরকারের জন্য ব্যার্থতা। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশ বা সুন্দরবনের জন্য যে ক্ষতিকর, সেটার চিত্র তুলে ধরে আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু অরপরও এটি তৈরি করে পরিবেশের ক্ষতি করা হয়েছে দুর্নীতির পথ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশে জ্বালানি সুবিচার সংকট কেবল একটি কারিগরি সমস্যা নয় এটি অধিকার সামা ও সুশাসন ব্যবস্থার প্রশ্ন। এটি আমাদের বাধ্য করে ভাবতে যে, কীভাবে জ্বালানি উৎপাদন, আমদানি, বণ্টন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন একটি বাবস্থা গড়ে তোলা যায়, যা সব নাগরিকের প্রয়োজন ও মর্যাদাকে প্রতিফলিত করে। সরকার অবকাঠামো ও সংযোগে অগ্রগতি অর্জন করলেও, গঠনগত সমস্যাগুলো এখনো রয়ে গেছে। দুর্নীতি, ব্যয়বহুল সেবা, পরিবেশ ধ্বংস ও বর্জনমূলক নীতি সেইসব মানুষকে প্রান্তিক করে দিচ্ছে যাদের জন্য জ্বালানি উন্নয়ন/রূপান্তর হওয়া উচিত। নইলে সে রূপান্তর ন্যাযা হয় না জ্বালানি সুবিচার ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। বাংলাদেশকে এখন একটি সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে হবে-কেন্দ্রীয় জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর প্রভাবশালী গোষ্ঠী-নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় এসিয়ে যাবে নাকি একটি ন্যায্য গণতান্ত্রিক ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তরের পথে হাঁটবে, যেখানে জনগণ ও প্রকৃতি অগ্রাধিকার পাবে। এখনই সময়। একটি কর্মপন্থা গ্রহণের, যা ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা অংশগ্রহণ ও দীর্ঘমেয়াদি সহনশীলতার নীতিতে পরিচালিত হবে। কেবল তখনই বাংলাদেশে সত্যিকারের সুবিচারের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি ২০২৪ সেই নির্দেশনা দেয়।
এজন্য কেবল দরকার বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ক্ষমতায়ন করা, যাতে তারা জুলানি রূপান্তরে সুশাসন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারে- এই লক্ষো কর্মপন্থা গৃহীত হতে হবে। জ্বালানি খাতের দুর্নীতি দূর করা গণবান্ধব জ্বালানি রুপান্তর নীতির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা, এবং ন্যায়সঙ্গত জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করা- এসবই জনগণ চায়। এমাই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে পক্ষপাতহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও স্বচ্ছ নজরদারি নিশ্চিত করার মাধ্যমে তা করা সম্ভব। একটি দক্ষ একাডেমিক ও গবেষণা সম্প্রদায় যদি সেসব ক্ষেত্রে এআই-ভিত্তিক সমাধানগুলোতে অবদান রাখে এবং ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তা যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহায়তায় জ্বালানি খাত বাবস্থাপনা, পরিচালনা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজেগুলো আরও কার্যকরভাবে করতে পারবে। তাতে ন্যায্য জ্বালানি রুপান্তর নিশ্চিত হবে। জনগণের জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণ হবে। তারা জ্বালানি সুবিচার পাবে।’
এসময় তিনি বলেন, আমরা বারবার বলছি, বিদ্যুৎ-অ্যালানি নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদের লিখিত জানান। আমরা আইনী প্রক্রিয়ায় যাবো। কিন্তু মাত্র একজন ছাড়া আর কেউ তা করেনি। শুধু এখানে মুখে বললে হবে না আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করুণ। আমরা সেই একজনের অভিযোগ নিয়ে আদালতে গিয়েছি, শীঘ্রই তার রায় পাবো। আশা করছি- আমাদের পক্ষেই পাবো।
তিনি আরও বলেন, শুধু পরিকল্পনা দিয়ে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। কারণ বর্তমানে প্রতিটা প্রতিষ্ঠানই (সরকারি-বেসরকারি) অলিগার্ক শ্রেণিতে পরিনত হয়েছে। কিন্তু এমন একটাও এনজিওকে আমি খুঁজে পাইনি, যারা দেখিয়ে দিতে পারছে- কোথায় হাত দিলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
এসময় তিনি বলেন, (আন্তর্জাতিক বাজারে ালানি তেলের দাম কমায় বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন) প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা করে মুনাফা করছে। কিন্তু দেশে সেই টাকার প্রাইস এডজাস্টমেন্ট (জ্যালানি তেলের মূলা সমন্বয়) করা হবে না। ক্যাব চায় ভোক্তাবান্ধব জ্বালানি নীতি তৈরিতে সরকারকে সহায়তা করা। (গ্রেডায়) ফান্ডে অলস টাকা ফেলিয়ে না রেখে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে ব্যয় করতে পারে সরকার। সমাপনী বক্তব্যে ভোক্তাবন্ধর রাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরিতে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন, ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া।