
আলী আহসান রবি: ০৩ জুলাই, ২০২৫, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেছেন, রবীন্দ্রনাাথ ও নজরুল দুজনই জীবনঘনিষ্ঠ কবি ছিলেন। জীবনঘনিষ্ঠ বলেই তাঁরা মানুষের কল্যাণ ও মনুষ্যত্বের বিকাশের কথা বলেছেন। আজ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিত মিলনায়তনে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উদ্ যাপন উপলক্ষ্যে দৈশিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল পাঠ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবারে ছোটকাল থেকে বড় হয়েছি, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল দুজনেই সেখানে ছিল। প্রতিটি মানুষের জীবনে সুখ, দুঃখ, আনন্দ, উল্লাস, ভালোলাগা, ভালবাসা, সমস্যা থাকতে পারে।কারো জীবন সংগ্রামী কিংবা স্বাছন্দের হতে পারে। সাহিত্য, কবিতা ও সঙ্গীত আমাদের জীবনের এবিষয়গুলো লাঘব করতে সহায়তা করে।
তিনি বলেন, মধ্যযুগের কবি বলেছেন, ” সবার উপরে মানুষ সত্য” নজরুলের কণ্ঠেও শুনেছি , “মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহীয়ান “, রবীন্দ্রনাথ বঙ্গজননীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, “মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে”।
সি আর আবরার বলেন, বর্তমানে আমরা দৈশিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখবো, মানুষ হিসেবে আমাদের যে কর্তব্য তা পালনে আমরা উদাসীন, নিষ্ক্রিয় ও ব্যর্থ। একজনের প্রতি অন্যজনের মানবিক সহানুভূতি, সহমর্মিতা আজ বিলুপ্ত প্রায়। নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থে অপরকে নির্যাতিত ও নিপীড়িত করতে আমরা কুণ্ঠা বোধ করি না, দ্বিধান্বিত হই না। বিশ্বের চারিদিকে আজ রণদামামা বেজে উঠেছে । এর ফলে লাঞ্ছিত হচ্ছে মানুষ বিপন্ন হচ্ছে মানবতা। এই নৈরাজ্য ও অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধেই নজরুল রণ হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, “আমি সেই দিন হব শান্ত/ যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না “। রবীন্দ্রনাথ চরম বিপর্যয়ের মধ্যেও মানুষের কল্যাণবোধের প্রতি আস্থা হারাতে চাননি; বলেছিলেন, “মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ “।
ড. আবরার বলেন, এই প্রসঙ্গে দার্শনিক Will Durant -এর একটি কথা স্মরণ করি। জীবনের শেষ বয়সে তিনি বেশ কয়েক খণ্ডে লিখেছিলেন The story of Civilisation. এই বইটি লেখার পর তিনি মানুষের ইতিহাস সম্পর্কে বলেছিলেন, “আমি যখনি মানুষের ইতিহাসের দিকে তাকিয়েছি, তখন মনে হয়েছে, এ যেন রক্তবাহী এক নদী। মানুষ পরস্পরের প্রতি নিষ্ঠুরতায়, ভ্রাত্রী ঘাতী সংঘাতে যে রক্ত ঝরিয়েছে তাই বয়ে নিয়ে চলেছে এই ভয়াবহ নদীর স্রোত। তা দেখে আমি বেদনায় বিষণ্ন হয়েছি। কিন্তু আমি যখন এই নদীর দুই তীরের দিকে তাকিয়েছি, তখন দেখলাম, সেখানে মানুষ কবিতার ছন্দে, গানের সুরে, সমুন্নত ভাস্কর্যে জীবনের জয়গাথা রচনা করে চলেছে “।
তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল এই ভয়াবহ পৃথিবীতে জীবনের জয়গান গাইবার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমাদের। এইজন্যই এই দুই কবি আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক। তাঁদের রচনার মানবিক আবেদনে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য তাঁদের পাঠ -অধ্যয়ন আমাদের জন্য আবশ্যিক।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মোরশেদ শফিউল হাসান, প্রাবন্ধিক ও গবেষক, অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি এবং জনাব কুদরত-এ-হুদা, প্রাবন্ধিক ও গবেষক, পরিচালক, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড. মো: ওমর ফারুক, রেক্টর (সচিব), বিসিএস প্রশাসন একাডেমি।