ঢাকা ০৩:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo আজ ১৮ই আগস্ট শিক্ষাবিদ যতীন সরকার স্যারের জন্মদিন Logo নওগাঁ জেলায় মাননীয় ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ বাংলাদেশ এর পক্ষে “বাংলাদেশ পুলিশ মেধাবৃত্তি-২০২৩” প্রদান Logo সিএমপি’র পাঁচলাইশ থানা পুলিশের অভিযানে ০২টি সাজা পরোয়ানাভুক্ত আসামী গ্রেফতার Logo সিএমপি’র কোতোয়ালী থানার অভিযানে ছিনতাই হওয়া মাত্র ০২ ঘন্টার মধ্যে সিএনজি উদ্ধারসহ ০৩ জন ছিনতাইকারী গ্রেফতার Logo সাভার উপজেলাকে ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ ঘোষণা: বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ জারি Logo খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঘোষিত অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ কর্মসূচি -২০২৫ Logo ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অপু  ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার Logo রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর বিষয়ে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব Logo বিএসএফের মাধ্যমে নিহত বাংলাদেশির লাশ হস্তান্তর Logo বদলীজনিত বিদায় সংবর্ধনাঃ কেএমপি

আজ ১৮ই আগস্ট শিক্ষাবিদ যতীন সরকার স্যারের জন্মদিন

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:৪৮:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫
  • ৫২৫ বার পড়া হয়েছে

মোঃ সালমান আহমেদ, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : প্রগতিশীল চেতনার দীপ্তিময় লেখক-সমাজ চিন্তক,বুদ্ধিজীবী যতীন সরকার। আলো ছড়ানোই ছিল যাঁর জীবনের ব্রত। তিনি বাংলা সাহিত্যের উর্বরভূমি নেত্রেকোনার কেন্দুয়ার আশুজিয়া ইউনিয়নের চন্দপাড়া গ্রামে ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তচিন্তার অগাদ পান্ডিত্যময় এই মানুষটি গত ১৩ আগস্ট/২০২৫ বেলা পৌনে ৩টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পার্থিব জগৎ-সংসার ত্যাগ করে অনন্তলোকে যাত্রা করেন। যে মাসে জন্ম সেই আগস্ট মাসেই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। পেছনে রেখে যান পরিবার পরিজনসহ অসংখ্য ভাব-শিষ্য-ভক্ত,অনুরাগী,লেখক,কবি-সাহিত্যিক,
সাংস্কৃিতিক, রাজনৈতিক,বুদ্ধিজীবী ও প্রগতিশীল মুক্তচেতনার অজস্র সংস্কৃতিজনকে। তিনি শিল্প সাহিত্যের নেত্রকোনায় জন্মগ্রহন করে নেত্রকোনাসহ পুরো ময়মনসিংহবাসীকে ধন্য করেছেন, গর্বিত করেছেন দেশকে,হয়ে উঠেছিলেন দেশের সম্পদ।
তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষকতা। তাঁর স্ত্রী কানন সরকারও একজন শিক্ষক। তাঁদের একমাত্র পুত্র সুমন সরকার বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং একমাত্র কন্যা সুদীপ্তা সরকার একজন বিচারক।
যতীন সরকার কেন্দুয়ার আশুজিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৪ সনে মেট্রিকুলেট, ১৯৫৭ সনে নেত্রকোনা কলেজ থেকে আই এ, ১৯৫৯ সনে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৬৩ সনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত‍্যে এম.এ পাশ করেন। পরে তিনি নেত্রকোনার বারহাট্টা হাইস্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে গৌরিপুর হাইস্কুল এবং মুমিনুন্নিসা মহিলা কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৪ সন থেকে জীবনের চার দশক নাসিরাবাদ কলেজে (৪২ বছর) শিক্ষকতা শেষে অবসর গ্রহন করেন।
সংগ্রামী যতীন সরকার আজীবন মার্কসবাদ-লেনিনবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। স্কুল জীবনে ভাষা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং তৎকালিন নেত্রকোনা মহকুমা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও কলেজ ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে আনন্দমোহন কলেজে অধ‍্যয়নের সময় ছাত্রলীগ ছেড়ে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পড়েন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে যুক্ত হন আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনেও।
ময়মনসিংহ ফিরে রাজনৈতিক দীক্ষা গুরু কমরেড মহাদেব সান্যাল, কমরেড আলতাব আলী, কমরেড জ‍্যোতিষ বোস, কমরেড অজয় রায়, কমরেড রতু রায়ের সংস্পর্শে এসে মার্কসবাদে দীক্ষা নেন। আজীবন ছিলেন কমিউনিস্ট। আন্দোলন করতে গিয়ে জেলও খেটেছেন বহুদিন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে ময়মনসিংহ বুদ্ধিজীবী সংগ্রাম পরিষদ গঠনের অন‍্যতম সংগঠক ছিলেন যতীন সরকার। যুদ্ধ শুরুর পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বাঘমারায় কমরেড মহাদেব সান্যাল ও তাড়াইলের কমরেড গঙ্গেশ সরকারের সাথে কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটিং সেলের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যতীন সরকার। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন ও মুক্তিযোদ্ধাদের তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণেও অংশ নেন তিনি।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে আবার শিক্ষকতায় যোগদেন এবং পার্টির সদস্য হিসেবে মার্কসবাদ চর্চা অব্যাহত রাখেন।
মার্কসবাদি রাজনীতির কারণে ১৯৭৬ সন থেকে ১৯৭৭ সনের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৮ মাস কারাভোগ করেন এই লেখক।
যতীন সরকার সারাজীবন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন। অসংখ্য সাংস্কৃতিক সংগঠনে মূখ্য ভূমিকাও পালন করেছেন তিনি। ছিলেন কেন্দ্রীয় উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি,মুক্ত বাতায়ন পাঠ চক্রের সভাপতি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নানা মর্যাদায় যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ, রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, বাংলাদেশ ফোকলোর সোসাইটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাঙ্গালী সংস্কৃতি সন্মিলন।
তিনি ছিলেন বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য। নির্মোহ এই মানুষটি ২০০৮ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন, ২০১০ সালে লাভ করেন দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদক। এ ছাড়া তিনি ১৯৬৭ সালে লাভ করেন ডক্টর এনামূল হক স্বর্ণপদক। ২৪ জানুয়ারি ২০০৬ তিনি ‘পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু-দর্শন’ বইয়ের জন্য ‘প্রথম আলো বর্ষ সেরা বই পুরস্কার পান। তাঁর প্রকাশিত ৩৫টি গ্রন্থ ও বেশ ক’টি সম্পাদনা গ্রন্থ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে সাহিত্যের কাছে প্রত‍্যাশা, পাকিস্তানের জন্ম-মৃত‍্যু দর্শন, মানব মন-মানব ধর্ম ও সমাজ বিপ্লব, বাংলাদেশের কবিগান, বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, নির্বাচিত প্রবন্ধ, কেদারনাথ মজুমদার, সংস্কৃতির সংগ্রাম, সিরাজউদ্দিন কাশিমপুরী, হরিচরণ আচার্য‍্য, চন্দ্র কুমার দে, গল্পে গল্পে ব‍্যাকরণ, ব‍্যকারণের ভয় অকারণ, সোনার তরী,জালাল গীতিকা সমগ্রসহ বেশ কিছু গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন।
আমৃত্য তিনি বিভিন্ন সংবাদ পত্রে নিয়মিত কলাম লিখতেন,যার শিরোনামই ছিল ব্যতিক্রম। যেমন, আমার যেটুকু সাধ‍্য, সোচ্চার অনুভব, মুক্ত বাতায়ন প্রান্তে’ ইত্যাদি।
এই বুদ্ধিদীপ্ত লেখকের প্রতি বছর ১৮ই আগস্ট তাঁর নেত্রকোনার বাণপ্রস্থ বাসভবনে জন্মবার্ষিকী খুব ঘটা করে পালন হয়ে আসলেও এবছর ১৩ আগস্ট তাঁর মৃত্যুর কারণে ওই দিন বাসভবনে পারবারিক শোকসভা ও পরবর্তীতে নাগরিক শোকসভা করা হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন স্যারের জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যু দিবসে স্মরণসভা করছেন।খণজন্মা এই বুদ্ধিজীবীর প্রয়ানে নেত্রকোনা ময়মনসিংহসহ সারাদেশের মুক্তচিন্তার মানুষসহ কবি সাহিত্যিকদের মাঝে যে শোকের আবহ বিরাজ করছে তা সহসা কেটে উঠা সম্ভব নয় বলে লেখক সাহিত্যিকগণ মনে করছেন। আমরাও আশা করছি এই শোক ভুলে সাহ্যত্য সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে স্যারের সপ্নপূরণে ব্রতী হবো,এই হোক আজকের অঙ্গীকার।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আজ ১৮ই আগস্ট শিক্ষাবিদ যতীন সরকার স্যারের জন্মদিন

আজ ১৮ই আগস্ট শিক্ষাবিদ যতীন সরকার স্যারের জন্মদিন

আপডেট সময় ০৯:৪৮:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

মোঃ সালমান আহমেদ, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : প্রগতিশীল চেতনার দীপ্তিময় লেখক-সমাজ চিন্তক,বুদ্ধিজীবী যতীন সরকার। আলো ছড়ানোই ছিল যাঁর জীবনের ব্রত। তিনি বাংলা সাহিত্যের উর্বরভূমি নেত্রেকোনার কেন্দুয়ার আশুজিয়া ইউনিয়নের চন্দপাড়া গ্রামে ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তচিন্তার অগাদ পান্ডিত্যময় এই মানুষটি গত ১৩ আগস্ট/২০২৫ বেলা পৌনে ৩টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পার্থিব জগৎ-সংসার ত্যাগ করে অনন্তলোকে যাত্রা করেন। যে মাসে জন্ম সেই আগস্ট মাসেই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। পেছনে রেখে যান পরিবার পরিজনসহ অসংখ্য ভাব-শিষ্য-ভক্ত,অনুরাগী,লেখক,কবি-সাহিত্যিক,
সাংস্কৃিতিক, রাজনৈতিক,বুদ্ধিজীবী ও প্রগতিশীল মুক্তচেতনার অজস্র সংস্কৃতিজনকে। তিনি শিল্প সাহিত্যের নেত্রকোনায় জন্মগ্রহন করে নেত্রকোনাসহ পুরো ময়মনসিংহবাসীকে ধন্য করেছেন, গর্বিত করেছেন দেশকে,হয়ে উঠেছিলেন দেশের সম্পদ।
তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষকতা। তাঁর স্ত্রী কানন সরকারও একজন শিক্ষক। তাঁদের একমাত্র পুত্র সুমন সরকার বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং একমাত্র কন্যা সুদীপ্তা সরকার একজন বিচারক।
যতীন সরকার কেন্দুয়ার আশুজিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৪ সনে মেট্রিকুলেট, ১৯৫৭ সনে নেত্রকোনা কলেজ থেকে আই এ, ১৯৫৯ সনে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৬৩ সনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত‍্যে এম.এ পাশ করেন। পরে তিনি নেত্রকোনার বারহাট্টা হাইস্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে গৌরিপুর হাইস্কুল এবং মুমিনুন্নিসা মহিলা কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৪ সন থেকে জীবনের চার দশক নাসিরাবাদ কলেজে (৪২ বছর) শিক্ষকতা শেষে অবসর গ্রহন করেন।
সংগ্রামী যতীন সরকার আজীবন মার্কসবাদ-লেনিনবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। স্কুল জীবনে ভাষা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং তৎকালিন নেত্রকোনা মহকুমা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও কলেজ ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে আনন্দমোহন কলেজে অধ‍্যয়নের সময় ছাত্রলীগ ছেড়ে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পড়েন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে যুক্ত হন আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনেও।
ময়মনসিংহ ফিরে রাজনৈতিক দীক্ষা গুরু কমরেড মহাদেব সান্যাল, কমরেড আলতাব আলী, কমরেড জ‍্যোতিষ বোস, কমরেড অজয় রায়, কমরেড রতু রায়ের সংস্পর্শে এসে মার্কসবাদে দীক্ষা নেন। আজীবন ছিলেন কমিউনিস্ট। আন্দোলন করতে গিয়ে জেলও খেটেছেন বহুদিন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে ময়মনসিংহ বুদ্ধিজীবী সংগ্রাম পরিষদ গঠনের অন‍্যতম সংগঠক ছিলেন যতীন সরকার। যুদ্ধ শুরুর পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বাঘমারায় কমরেড মহাদেব সান্যাল ও তাড়াইলের কমরেড গঙ্গেশ সরকারের সাথে কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটিং সেলের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যতীন সরকার। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন ও মুক্তিযোদ্ধাদের তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণেও অংশ নেন তিনি।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে আবার শিক্ষকতায় যোগদেন এবং পার্টির সদস্য হিসেবে মার্কসবাদ চর্চা অব্যাহত রাখেন।
মার্কসবাদি রাজনীতির কারণে ১৯৭৬ সন থেকে ১৯৭৭ সনের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৮ মাস কারাভোগ করেন এই লেখক।
যতীন সরকার সারাজীবন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন। অসংখ্য সাংস্কৃতিক সংগঠনে মূখ্য ভূমিকাও পালন করেছেন তিনি। ছিলেন কেন্দ্রীয় উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি,মুক্ত বাতায়ন পাঠ চক্রের সভাপতি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নানা মর্যাদায় যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ, রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, বাংলাদেশ ফোকলোর সোসাইটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাঙ্গালী সংস্কৃতি সন্মিলন।
তিনি ছিলেন বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য। নির্মোহ এই মানুষটি ২০০৮ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন, ২০১০ সালে লাভ করেন দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদক। এ ছাড়া তিনি ১৯৬৭ সালে লাভ করেন ডক্টর এনামূল হক স্বর্ণপদক। ২৪ জানুয়ারি ২০০৬ তিনি ‘পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু-দর্শন’ বইয়ের জন্য ‘প্রথম আলো বর্ষ সেরা বই পুরস্কার পান। তাঁর প্রকাশিত ৩৫টি গ্রন্থ ও বেশ ক’টি সম্পাদনা গ্রন্থ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে সাহিত্যের কাছে প্রত‍্যাশা, পাকিস্তানের জন্ম-মৃত‍্যু দর্শন, মানব মন-মানব ধর্ম ও সমাজ বিপ্লব, বাংলাদেশের কবিগান, বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, নির্বাচিত প্রবন্ধ, কেদারনাথ মজুমদার, সংস্কৃতির সংগ্রাম, সিরাজউদ্দিন কাশিমপুরী, হরিচরণ আচার্য‍্য, চন্দ্র কুমার দে, গল্পে গল্পে ব‍্যাকরণ, ব‍্যকারণের ভয় অকারণ, সোনার তরী,জালাল গীতিকা সমগ্রসহ বেশ কিছু গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন।
আমৃত্য তিনি বিভিন্ন সংবাদ পত্রে নিয়মিত কলাম লিখতেন,যার শিরোনামই ছিল ব্যতিক্রম। যেমন, আমার যেটুকু সাধ‍্য, সোচ্চার অনুভব, মুক্ত বাতায়ন প্রান্তে’ ইত্যাদি।
এই বুদ্ধিদীপ্ত লেখকের প্রতি বছর ১৮ই আগস্ট তাঁর নেত্রকোনার বাণপ্রস্থ বাসভবনে জন্মবার্ষিকী খুব ঘটা করে পালন হয়ে আসলেও এবছর ১৩ আগস্ট তাঁর মৃত্যুর কারণে ওই দিন বাসভবনে পারবারিক শোকসভা ও পরবর্তীতে নাগরিক শোকসভা করা হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন স্যারের জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যু দিবসে স্মরণসভা করছেন।খণজন্মা এই বুদ্ধিজীবীর প্রয়ানে নেত্রকোনা ময়মনসিংহসহ সারাদেশের মুক্তচিন্তার মানুষসহ কবি সাহিত্যিকদের মাঝে যে শোকের আবহ বিরাজ করছে তা সহসা কেটে উঠা সম্ভব নয় বলে লেখক সাহিত্যিকগণ মনে করছেন। আমরাও আশা করছি এই শোক ভুলে সাহ্যত্য সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে স্যারের সপ্নপূরণে ব্রতী হবো,এই হোক আজকের অঙ্গীকার।