মাসুম বিল্লাহ আরিফ ঃ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নারীর অবদান জোরদার করণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল (এনএসএসএস) ২০১৫ এর আওতায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যার আওতায় ১০,৪০,০০০ অসচ্ছল নারীকে পুষ্টি চাল বিতরণ ও ৯টি মৌলিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
• ভিডব্লিউবি কর্মসূচির একটি অন্যতম প্রধান উপাদান হলো “ইনভেস্টমেন্ট কম্পোনেন্ট ফর ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (আইসিভিজিডি)” প্রকল্প যার মাধ্যমে ভিডব্লিউবি কর্মসূচির উপকারভোগীর মধ্য থেকে প্রথম পর্যায়ে ২০১৫-২০১৮ মেয়াদে বাংলাদেশের আটটি উপজেলায় ৮ হাজার নারী এবং বর্তমানে দ্বিতীয় পর্যায়ে (১ম সংশোধিত) ৬৪টি জেলার প্রতিটি জেলা থেকে একটি করে উপজেলা নিয়ে মোট ৬৪ টি উপজেলায় এক লাখ (১০০,০০০) নারীকে উপকারভোগী হিসেবে নির্বাচিন করা হয়েছে। উক্ত উপকারভোগীদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করার লক্ষ্যে নগদ অর্থ অনুদান, চাল বিতরণ, ৫টি নির্ধারিত বিষযের অধীনে ৫টি মডিউলে প্রশিক্ষণ এবং ১টি বিশেষ মডিউলের অধীনে উপকারভোগীর নিজের পছন্দ ও সুবিধাজনক একটি বিষয়ে উন্নত মানের প্রশিক্ষণ প্রদান ও ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরিতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।
আজ বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এর যৌথ উদ্যোগে উক্ত আইসিভিজিডি প্রকল্পের এক লক্ষ উপকারভোগীর মধ্যে উপযুক্ত ১৬,৯২৮ জন নারী উপকারভোগীদেরকে জিটুপি (গভর্নমেন্ট টু পারসন) পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের আয়বর্ধক কার্যক্রম/ব্যবসা পরিচালনার জন্য এককালীন ২০,০০০ টাকা বিনিযোগ অনুদান বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি (এমপি)। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনাব নাজমা মোবারক এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডমেনিকো স্কালপেল্লি। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খানের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রকল্প পরিচালক এস, এম, আরশাদ ইমাম সহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, ২ জন উপকারভোগী এবং অন্যান্য অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, এই উপকারভোগীরা প্রত্যেকে জীবন দক্ষতা প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং উন্নত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। এখন তারা নিজস্ব উদ্যোগে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করতে প্রস্তুত। এ এ ব্যবসা অনুদানঅসচ্ছল নারীদের উন্নয়ন সাধনের জন্য প্রদান করা হযেছে, যাতে তারা প্রযোজনীয় সম্পদ ব্যবহার করে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারে এবং পরিবার ও সমাজে অবদান রাখতে পারে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি(এমপি) বলেন, ‘আজকের অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশের নারীর। ক্ষমতাষনের জন্য আমাদের চলমান প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এই বিনিযোগ অনুদান প্রদানের মাধ্যাম আমরা কেবল নারীদের স্বতন্ত্রভাবেই সমর্থন করছি না, বরং নারীদের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করছি। নারীদের উন্নয়নে এবং দেশের অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার ক্ষেয়ে বর্তমান সরকার এমন সুযোগ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডমেনিকো স্কালপেল্লি বলেন, “এই রূপান্তরমূলক উদ্যোগে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে অংশীদার হতে পেরে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সম্মানিত। নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে টেকসই উন্নযনের কেন্দ্রবিন্দুতে, এবং এ বিনিযোগ অনুদান নারীদের স্থিতিশীল জীবিকা গড়ে তোলায় সক্ষম করবে। আমরা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অপুষ্টি মোকাবেলায় সরকারের প্রচেষ্টাকে সর্বতোভাবে সমর্থন করার জন্য নিবেদিত, যার মাধ্যমে সবার জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তোলা সম্ভব হবে।”
অনুষ্ঠানে উপকারভোগীদের জীবনে আইসিভিজিডি প্রকল্পের ইতিবাচক প্রভাব তুলে ধরা হয় এবং টেকসই উন্নয়ন ও লিঙ্গ সমতার প্রতি সরকারের যে প্রতিশ্রুতি তা তুলে ধরা হয়।