ঢাকা ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo রাজধানীর মাটিকাটা এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান: অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ১০ সন্ত্রাসী গ্রেফতার Logo জামিন পেলেন নুসরাত ফারিয়া Logo ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে চলছে নগর ভবন ব্লকেড কর্মসূচি Logo ভারতীয় বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা Logo আসিফকে অপদস্ত কইরেন না Logo মোহাম্মদপুরে সিটিটিসির অভিযানে চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ী রবিন গ্রেফতার Logo প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নে করণীয় নির্ধারণে বৈঠক Logo পলিথিনের বিকল্প হিসেবে কাপড় ও পাটের ব্যাগ ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।- পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান Logo নুসরাত ফারিয়ার গ্রেফতার নিয়ে যা বললেন উপদেষ্টা ফারুকী Logo জনগণকে কাঙ্ক্ষিত আইনানুগ সেবা দেওয়ার মাধ্যমে জনগণের মন জয় করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার

বিড়ালের শহর…

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:৪৩:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৫৭২ বার পড়া হয়েছে

 

ট্রেন ‘টোকিও স্টেশন’ ছাড়ার পর টেঙ্গো সাথে আনা বইটা বের করলো, পেপার ব্যাক ছাপা। ভ্রমণ নিয়ে লেখা অনেক গুলো ছোটগল্পের সমাহার, এর মধ্যে ‘বিড়ালের শহর’ নামের একটা গল্প আছে। জার্মান লেখকের লেখা, লেখক পরিচিত নয়। ভূমিকা অনুসারে গল্পটি লেখা, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে।
নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য ছাড়াই একাকী ভ্রমণ করছে, সে সাধারণত ট্রেনেই বেড়ায়। চলতি পথে কোনও জায়গা পছন্দ হয়ে গেলে হুট করে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে। কোথাও একটা রুম ভাড়া নেয়, সেখানে কদিন ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ায়, যতদিন মন চায় থাকে। তারপর জায়গাটা দেখা শেষ হলে অন্য কোনও ট্রেনে চাপে, ছুটিগুলো এভাবেই কাটায়।
একদিন, ট্রেনের জানালা দিয়ে সুন্দর এক নদী দেখতে পেলো, আঁকাবাঁকা, পাশে সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের পাদদেশে ছোট্ট একটা শহর, পুরানো পাথরের সাঁকো পার হয়ে শহরে যেতে হয়। স্টেশনে ট্রেন থামলে ব্যাগ নিয়ে ঝটপট নেমে পড়লো, নামতেই ট্রেন ছেড়ে গেলো। প্লাটফরমে সে ছাড়া আর কেউই নামে নি।
স্টেশনটা খুব একটা বড় না, প্লাটফরম একবারেই ফাঁকা, কোনও মাস্টার নেই এমনকি ঘন্টা বাজানোর জন্যও কেউ নেই, অবশ্য স্টেশনটা খুব একটা বড়ও না।
সাঁকো পার হয়ে শহরে ঢুকলো, শহরের সবগুলো দোকানপাটই বন্ধ। এমনকি, টাউনহলটাও জনশূন্য! শহরে একটাই হোটেল, অথচ রিসেপশনে কেউ নেই। জায়গাটা দেখে মনে হচ্ছে জনবসতিহীন। শহরের লোকেরা সম্ভবত অন্যকোথাও গেছে নাকি দুপুরে খাবার পর ঘুম দিচ্ছে! কিন্তু সবে তো সকাল সাড়ে দশটা!
লাঞ্চের সময় আরো অনেক পরে। সম্ভবত কোনো দুর্ঘটনার কারণে এর বাসিন্দারা অন্য কোথাও চলে গেছে, শহর ছেড়ে। যাই হোক, কাল সকালের আগে আর ট্রেন আসবে না। সুতরাং এখানে রাত কাটানো করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
আসলে এ শহরটা বিড়ালদের, সুর্যাস্তের সময় হতেই অনেকগুলো বিড়াল সাঁকো পার হয়ে আসতে লাগলো, ওরা আসছে দলে দলে, নানা প্রকারের নানান রঙের। সাধারণ বিড়ালের চেয়ে এরা একটু বড়, কিন্তু তারপরও বিড়াল তো বিড়ালই। এমন দৃশ্য দেখে সে হতবিহবল, ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। সে ছুটতে শুরু করলো শহরের মাঝখানে ঘন্টা-ঘর (Bell Tower) এর দিকে।
কোনওমতে টাওয়ারে উঠে লুকানোর জায়গা খুঁজতে লাগলো, দলে দলে আরও বিড়াল আসছে, ছোট্ট জানালার ফাঁক দিয়ে দেখলো। ওরা এসেই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে, কেউ দোকানের সাটার খুললো, কেউ ডেস্কে বসলো ডিউটি করার জন্যে।
একটু পর আরো অনেক বিড়াল আসলো সাঁকো পার হয়ে,এরা দোকানে জিনিষপত্র কিনলো, টাউনহলে গেলো নানান কাজে। কেউ রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া-দাওয়া সারলো, কেউবা বারে বসে বিয়ার পান করলো। এমনকি কেউ কেউ বিড়ালের গানও গাইলো।
বিড়াল অন্ধকারে দেখতে পায়, তাই দেখার জন্যে ওদের কোনও আলোর দরকার ছিলো না। সে রাতে পূর্ণ চাঁদ শহরটাকে আলোকিত করে রেখেছে ফলে বেল টাওয়ারের চুড়া থেকে সে সবকিছুই দেখতে পাচ্ছে। সকালের আলো ফোটার আগেই সব বিড়াল কাজ শেষ করে সাঁকো পার হয়ে চলে গেলো।

শহরটা পুনরায় নির্জন হয়ে গেলো….
লেখাটি চলমান….

লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশের আইন প্রশিক্ষক হাসান হাফিজুর রহমান।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

রাজধানীর মাটিকাটা এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান: অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ১০ সন্ত্রাসী গ্রেফতার

বিড়ালের শহর…

আপডেট সময় ০১:৪৩:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

 

ট্রেন ‘টোকিও স্টেশন’ ছাড়ার পর টেঙ্গো সাথে আনা বইটা বের করলো, পেপার ব্যাক ছাপা। ভ্রমণ নিয়ে লেখা অনেক গুলো ছোটগল্পের সমাহার, এর মধ্যে ‘বিড়ালের শহর’ নামের একটা গল্প আছে। জার্মান লেখকের লেখা, লেখক পরিচিত নয়। ভূমিকা অনুসারে গল্পটি লেখা, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে।
নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য ছাড়াই একাকী ভ্রমণ করছে, সে সাধারণত ট্রেনেই বেড়ায়। চলতি পথে কোনও জায়গা পছন্দ হয়ে গেলে হুট করে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে। কোথাও একটা রুম ভাড়া নেয়, সেখানে কদিন ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ায়, যতদিন মন চায় থাকে। তারপর জায়গাটা দেখা শেষ হলে অন্য কোনও ট্রেনে চাপে, ছুটিগুলো এভাবেই কাটায়।
একদিন, ট্রেনের জানালা দিয়ে সুন্দর এক নদী দেখতে পেলো, আঁকাবাঁকা, পাশে সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের পাদদেশে ছোট্ট একটা শহর, পুরানো পাথরের সাঁকো পার হয়ে শহরে যেতে হয়। স্টেশনে ট্রেন থামলে ব্যাগ নিয়ে ঝটপট নেমে পড়লো, নামতেই ট্রেন ছেড়ে গেলো। প্লাটফরমে সে ছাড়া আর কেউই নামে নি।
স্টেশনটা খুব একটা বড় না, প্লাটফরম একবারেই ফাঁকা, কোনও মাস্টার নেই এমনকি ঘন্টা বাজানোর জন্যও কেউ নেই, অবশ্য স্টেশনটা খুব একটা বড়ও না।
সাঁকো পার হয়ে শহরে ঢুকলো, শহরের সবগুলো দোকানপাটই বন্ধ। এমনকি, টাউনহলটাও জনশূন্য! শহরে একটাই হোটেল, অথচ রিসেপশনে কেউ নেই। জায়গাটা দেখে মনে হচ্ছে জনবসতিহীন। শহরের লোকেরা সম্ভবত অন্যকোথাও গেছে নাকি দুপুরে খাবার পর ঘুম দিচ্ছে! কিন্তু সবে তো সকাল সাড়ে দশটা!
লাঞ্চের সময় আরো অনেক পরে। সম্ভবত কোনো দুর্ঘটনার কারণে এর বাসিন্দারা অন্য কোথাও চলে গেছে, শহর ছেড়ে। যাই হোক, কাল সকালের আগে আর ট্রেন আসবে না। সুতরাং এখানে রাত কাটানো করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
আসলে এ শহরটা বিড়ালদের, সুর্যাস্তের সময় হতেই অনেকগুলো বিড়াল সাঁকো পার হয়ে আসতে লাগলো, ওরা আসছে দলে দলে, নানা প্রকারের নানান রঙের। সাধারণ বিড়ালের চেয়ে এরা একটু বড়, কিন্তু তারপরও বিড়াল তো বিড়ালই। এমন দৃশ্য দেখে সে হতবিহবল, ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। সে ছুটতে শুরু করলো শহরের মাঝখানে ঘন্টা-ঘর (Bell Tower) এর দিকে।
কোনওমতে টাওয়ারে উঠে লুকানোর জায়গা খুঁজতে লাগলো, দলে দলে আরও বিড়াল আসছে, ছোট্ট জানালার ফাঁক দিয়ে দেখলো। ওরা এসেই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে, কেউ দোকানের সাটার খুললো, কেউ ডেস্কে বসলো ডিউটি করার জন্যে।
একটু পর আরো অনেক বিড়াল আসলো সাঁকো পার হয়ে,এরা দোকানে জিনিষপত্র কিনলো, টাউনহলে গেলো নানান কাজে। কেউ রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া-দাওয়া সারলো, কেউবা বারে বসে বিয়ার পান করলো। এমনকি কেউ কেউ বিড়ালের গানও গাইলো।
বিড়াল অন্ধকারে দেখতে পায়, তাই দেখার জন্যে ওদের কোনও আলোর দরকার ছিলো না। সে রাতে পূর্ণ চাঁদ শহরটাকে আলোকিত করে রেখেছে ফলে বেল টাওয়ারের চুড়া থেকে সে সবকিছুই দেখতে পাচ্ছে। সকালের আলো ফোটার আগেই সব বিড়াল কাজ শেষ করে সাঁকো পার হয়ে চলে গেলো।

শহরটা পুনরায় নির্জন হয়ে গেলো….
লেখাটি চলমান….

লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশের আইন প্রশিক্ষক হাসান হাফিজুর রহমান।