ঢাকা ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo কিছু কিছু পুলিশ এখনো ভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে: নবী উল্লাহ নবী Logo সৎও মিষ্টভাষী উপসচিব আবুল হাসান Logo বিজিবি’কে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার Logo ১০ বছরের জন্য এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে Logo তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী রাহাত ফাতেহ আলী খানের সৌজন্য সাক্ষাৎ Logo রাজনীতিবিদ শেখ রিয়াজ উদ্দিন রানার কিছু কথা Logo কালিগঞ্জে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদ্বোধন হয়েছে ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি মেলা Logo সাবেক সচিব ইসমাইল হোসেনকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ Logo বিগত সরকারের কথিত উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জ করে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা Logo ময়মনসিংহে ‘ফ্যাক্টস ফর লাইফ’ কর্মশালা

বিড়ালের শহর…

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:৪৩:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

 

ট্রেন ‘টোকিও স্টেশন’ ছাড়ার পর টেঙ্গো সাথে আনা বইটা বের করলো, পেপার ব্যাক ছাপা। ভ্রমণ নিয়ে লেখা অনেক গুলো ছোটগল্পের সমাহার, এর মধ্যে ‘বিড়ালের শহর’ নামের একটা গল্প আছে। জার্মান লেখকের লেখা, লেখক পরিচিত নয়। ভূমিকা অনুসারে গল্পটি লেখা, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে।
নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য ছাড়াই একাকী ভ্রমণ করছে, সে সাধারণত ট্রেনেই বেড়ায়। চলতি পথে কোনও জায়গা পছন্দ হয়ে গেলে হুট করে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে। কোথাও একটা রুম ভাড়া নেয়, সেখানে কদিন ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ায়, যতদিন মন চায় থাকে। তারপর জায়গাটা দেখা শেষ হলে অন্য কোনও ট্রেনে চাপে, ছুটিগুলো এভাবেই কাটায়।
একদিন, ট্রেনের জানালা দিয়ে সুন্দর এক নদী দেখতে পেলো, আঁকাবাঁকা, পাশে সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের পাদদেশে ছোট্ট একটা শহর, পুরানো পাথরের সাঁকো পার হয়ে শহরে যেতে হয়। স্টেশনে ট্রেন থামলে ব্যাগ নিয়ে ঝটপট নেমে পড়লো, নামতেই ট্রেন ছেড়ে গেলো। প্লাটফরমে সে ছাড়া আর কেউই নামে নি।
স্টেশনটা খুব একটা বড় না, প্লাটফরম একবারেই ফাঁকা, কোনও মাস্টার নেই এমনকি ঘন্টা বাজানোর জন্যও কেউ নেই, অবশ্য স্টেশনটা খুব একটা বড়ও না।
সাঁকো পার হয়ে শহরে ঢুকলো, শহরের সবগুলো দোকানপাটই বন্ধ। এমনকি, টাউনহলটাও জনশূন্য! শহরে একটাই হোটেল, অথচ রিসেপশনে কেউ নেই। জায়গাটা দেখে মনে হচ্ছে জনবসতিহীন। শহরের লোকেরা সম্ভবত অন্যকোথাও গেছে নাকি দুপুরে খাবার পর ঘুম দিচ্ছে! কিন্তু সবে তো সকাল সাড়ে দশটা!
লাঞ্চের সময় আরো অনেক পরে। সম্ভবত কোনো দুর্ঘটনার কারণে এর বাসিন্দারা অন্য কোথাও চলে গেছে, শহর ছেড়ে। যাই হোক, কাল সকালের আগে আর ট্রেন আসবে না। সুতরাং এখানে রাত কাটানো করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
আসলে এ শহরটা বিড়ালদের, সুর্যাস্তের সময় হতেই অনেকগুলো বিড়াল সাঁকো পার হয়ে আসতে লাগলো, ওরা আসছে দলে দলে, নানা প্রকারের নানান রঙের। সাধারণ বিড়ালের চেয়ে এরা একটু বড়, কিন্তু তারপরও বিড়াল তো বিড়ালই। এমন দৃশ্য দেখে সে হতবিহবল, ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। সে ছুটতে শুরু করলো শহরের মাঝখানে ঘন্টা-ঘর (Bell Tower) এর দিকে।
কোনওমতে টাওয়ারে উঠে লুকানোর জায়গা খুঁজতে লাগলো, দলে দলে আরও বিড়াল আসছে, ছোট্ট জানালার ফাঁক দিয়ে দেখলো। ওরা এসেই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে, কেউ দোকানের সাটার খুললো, কেউ ডেস্কে বসলো ডিউটি করার জন্যে।
একটু পর আরো অনেক বিড়াল আসলো সাঁকো পার হয়ে,এরা দোকানে জিনিষপত্র কিনলো, টাউনহলে গেলো নানান কাজে। কেউ রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া-দাওয়া সারলো, কেউবা বারে বসে বিয়ার পান করলো। এমনকি কেউ কেউ বিড়ালের গানও গাইলো।
বিড়াল অন্ধকারে দেখতে পায়, তাই দেখার জন্যে ওদের কোনও আলোর দরকার ছিলো না। সে রাতে পূর্ণ চাঁদ শহরটাকে আলোকিত করে রেখেছে ফলে বেল টাওয়ারের চুড়া থেকে সে সবকিছুই দেখতে পাচ্ছে। সকালের আলো ফোটার আগেই সব বিড়াল কাজ শেষ করে সাঁকো পার হয়ে চলে গেলো।

শহরটা পুনরায় নির্জন হয়ে গেলো….
লেখাটি চলমান….

লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশের আইন প্রশিক্ষক হাসান হাফিজুর রহমান।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কিছু কিছু পুলিশ এখনো ভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে: নবী উল্লাহ নবী

বিড়ালের শহর…

আপডেট সময় ০১:৪৩:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

 

ট্রেন ‘টোকিও স্টেশন’ ছাড়ার পর টেঙ্গো সাথে আনা বইটা বের করলো, পেপার ব্যাক ছাপা। ভ্রমণ নিয়ে লেখা অনেক গুলো ছোটগল্পের সমাহার, এর মধ্যে ‘বিড়ালের শহর’ নামের একটা গল্প আছে। জার্মান লেখকের লেখা, লেখক পরিচিত নয়। ভূমিকা অনুসারে গল্পটি লেখা, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে।
নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য ছাড়াই একাকী ভ্রমণ করছে, সে সাধারণত ট্রেনেই বেড়ায়। চলতি পথে কোনও জায়গা পছন্দ হয়ে গেলে হুট করে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে। কোথাও একটা রুম ভাড়া নেয়, সেখানে কদিন ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ায়, যতদিন মন চায় থাকে। তারপর জায়গাটা দেখা শেষ হলে অন্য কোনও ট্রেনে চাপে, ছুটিগুলো এভাবেই কাটায়।
একদিন, ট্রেনের জানালা দিয়ে সুন্দর এক নদী দেখতে পেলো, আঁকাবাঁকা, পাশে সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের পাদদেশে ছোট্ট একটা শহর, পুরানো পাথরের সাঁকো পার হয়ে শহরে যেতে হয়। স্টেশনে ট্রেন থামলে ব্যাগ নিয়ে ঝটপট নেমে পড়লো, নামতেই ট্রেন ছেড়ে গেলো। প্লাটফরমে সে ছাড়া আর কেউই নামে নি।
স্টেশনটা খুব একটা বড় না, প্লাটফরম একবারেই ফাঁকা, কোনও মাস্টার নেই এমনকি ঘন্টা বাজানোর জন্যও কেউ নেই, অবশ্য স্টেশনটা খুব একটা বড়ও না।
সাঁকো পার হয়ে শহরে ঢুকলো, শহরের সবগুলো দোকানপাটই বন্ধ। এমনকি, টাউনহলটাও জনশূন্য! শহরে একটাই হোটেল, অথচ রিসেপশনে কেউ নেই। জায়গাটা দেখে মনে হচ্ছে জনবসতিহীন। শহরের লোকেরা সম্ভবত অন্যকোথাও গেছে নাকি দুপুরে খাবার পর ঘুম দিচ্ছে! কিন্তু সবে তো সকাল সাড়ে দশটা!
লাঞ্চের সময় আরো অনেক পরে। সম্ভবত কোনো দুর্ঘটনার কারণে এর বাসিন্দারা অন্য কোথাও চলে গেছে, শহর ছেড়ে। যাই হোক, কাল সকালের আগে আর ট্রেন আসবে না। সুতরাং এখানে রাত কাটানো করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
আসলে এ শহরটা বিড়ালদের, সুর্যাস্তের সময় হতেই অনেকগুলো বিড়াল সাঁকো পার হয়ে আসতে লাগলো, ওরা আসছে দলে দলে, নানা প্রকারের নানান রঙের। সাধারণ বিড়ালের চেয়ে এরা একটু বড়, কিন্তু তারপরও বিড়াল তো বিড়ালই। এমন দৃশ্য দেখে সে হতবিহবল, ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। সে ছুটতে শুরু করলো শহরের মাঝখানে ঘন্টা-ঘর (Bell Tower) এর দিকে।
কোনওমতে টাওয়ারে উঠে লুকানোর জায়গা খুঁজতে লাগলো, দলে দলে আরও বিড়াল আসছে, ছোট্ট জানালার ফাঁক দিয়ে দেখলো। ওরা এসেই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে, কেউ দোকানের সাটার খুললো, কেউ ডেস্কে বসলো ডিউটি করার জন্যে।
একটু পর আরো অনেক বিড়াল আসলো সাঁকো পার হয়ে,এরা দোকানে জিনিষপত্র কিনলো, টাউনহলে গেলো নানান কাজে। কেউ রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া-দাওয়া সারলো, কেউবা বারে বসে বিয়ার পান করলো। এমনকি কেউ কেউ বিড়ালের গানও গাইলো।
বিড়াল অন্ধকারে দেখতে পায়, তাই দেখার জন্যে ওদের কোনও আলোর দরকার ছিলো না। সে রাতে পূর্ণ চাঁদ শহরটাকে আলোকিত করে রেখেছে ফলে বেল টাওয়ারের চুড়া থেকে সে সবকিছুই দেখতে পাচ্ছে। সকালের আলো ফোটার আগেই সব বিড়াল কাজ শেষ করে সাঁকো পার হয়ে চলে গেলো।

শহরটা পুনরায় নির্জন হয়ে গেলো….
লেখাটি চলমান….

লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশের আইন প্রশিক্ষক হাসান হাফিজুর রহমান।