
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।এছাড়া শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন,জুলাই শহীদদের পরিবারের মাঝে চেক বিতরণ করা হয়।
জুলাই বিপ্লবের শহীদদের আত্মত্যাগের স্মরণে এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় আজ ২৬ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ (শনিবার) জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠানমালা ২০২৫ এর অংশ হিসেবে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। রাজধানীর পেট্রোবাংলা ভবনের ড. হাবিবুর রহমান অডিটোরিয়ামে (২য় তলা) আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত জুলাই যোদ্ধা এবং সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন পেট্রোবাংলার ইমাম ক্বারী মাওলানা মোঃ আব্দুল হাই। এরপর জুলাই আন্দোলনের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন আলোচক তাদের মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন।
আহত জুলাই যোদ্ধা হোসাইন আহমেদ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য এবং তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি ৫ই আগস্ট যাত্রাবাড়ী পুলিশ থানার সামনের ঘটনার বর্ণনা করে বলেন, “পুলিশ আমার হাতে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে, যার ফলে আমার হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর মৃত ভেবে আমাকে গাড়িতে তোলা হয়।” তারপর তার ভাইরা তাকে উদ্ধার করে কিভাবে হাসপাতালে ভর্তি করে তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন।
নিহত ফাইয়াজের বাবা আলহাজ্ব শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আমার ছেলের বিদেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল। তার সরকারি চাকরি করার কথা ছিল না। তারপরও সে আন্দোলনে গিয়েছিল বৈষম্য, দুর্নীতি, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। ১৮ই জুলাই ধানমন্ডি ২৭ নাম্বারের কাছে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়।” তিনি আরও বলেন, “পিতার কাছে সন্তানের লাশ সব থেকে ভারী। এসকল অনুষ্ঠানে আসলে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ আরো বেড়ে যায়, তারপরও সন্তানের জন্য সম্মান পাচ্ছি এটা ভেবে সম্মানিত বোধ করি।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সচিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, জুলাই বিপ্লবের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাদের আত্মত্যাগকে জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে যে এখনো ভালো মানুষ আছে, বাংলাদেশ যে এখনো নষ্ট হয়ে যায়নি, বিশ্বের দরবারে নিজেদের অবস্থানের জন্য বাংলাদেশের মানুষের যে একটা স্পৃহা আছে, দেশের প্রতি যে ভালোবাসা আছে, তার প্রমাণ এই জুলাই বিপ্লব। এটি একটি মাইলফলক। মাইলস্টোন কলেজের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত সকলের কথা স্মরণ করে তিনি বিশেষ করে শিক্ষিকাদের আত্মত্যাগকে একটি বিরল ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, এটা দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, সমাজের প্রতি যে ভালোবাসা তার বহিঃপ্রকাশ। এ সকল ঘটনা আমাদের অনুপ্রাণিত করে।”
আরিফ নামের একজন জুলাই যোদ্ধার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “সে তার মাকে চিঠি লিখে আন্দোলনে যায়, সে না ফিরলেও তার দেশ ফিরবে। এ থেকে বোঝা যায় জুলাই বিপ্লব সরাসরি দেশ প্রেমের সাথে জড়িত। দুর্নীতি ও জুলাই আন্দোলন দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ব্যাপার।”
সচিব মহোদয় উপসংহারে বলেন, “এ সকল ঘটনা থেকে বোঝা যায় দেশে ভালো মানুষের সংখ্যা বেশি। গুটিকয়েক খারাপ মানুষের জন্য দেশকে নষ্ট হতে দিতে পারি না। আমাদের দায়িত্ব হল তাদেরকে চিহ্নিত করা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাতে তারা আর দেশের ক্ষতি করতে না পারে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনাব মো: আমিন উল আহসান, চেয়ারম্যান (সচিব), বিপিসি বলেন, “আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ কাজ আছে, দায়িত্ব আছে, আমরা যদি নিজ নিজ কাজ সঠিকভাবে করি, সঠিক দায়িত্ব পালন করি তবে মানুষের অধিকার ক্ষুন্ন হয় না, বৈষম্য তৈরি হয় না। সরকারি কর্মচারী হিসেবে আমাদেরকে মনে রাখতে হবে একদিন আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে, প্রধান বিচারপতি হলেও পার পাওয়া যাবে না।”
আলোচনা শেষে শহীদ পরিবার এবং আহত জুলাই যোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়। এসময় জ্বালানি বিভাগের বিভিন্ন কোম্পানির পক্ষ থেকে জুলাই শহীদ ১৬টি পরিবার ও একজন আহতের মাঝে সম্মাননা স্মারক হিসেবে এক লাখ টাকা করে মোট সতেরো লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতি জনাব মো: রেজানুর রহমান, চেয়ারম্যান, পেট্রোবাংলা, সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং অনুষ্ঠানে আগত শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে দেশ গঠনে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয় মাওলানা গাজী সানাউল্লাহ কর্তৃক পরিচালিত এক বিশেষ দোয়া মাহফিল ও মোনাজাতের মাধ্যমে, যেখানে জুলাই আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।