
মোঃ কাইয়ুম বাদশাহ, মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার সীমান্তবর্তী রূপনগর এলাকায় ভারতীয় গরু আটককে কেন্দ্র করে চোরাই কারবারিদের সঙ্গে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সংঘর্ষে এক নৌকার মাঝি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বিজিবির একজন সদস্যসহ অন্তত চারজন আহত হয়েছেন।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাঙ্গালভিটা বিওপি’র জেসিও সুবেদার সিগন্যাল মো: ইসরাইল খান ও তার সঙ্গে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষ টহল দল সীমান্ত পিলার ১১৯০/১৫-এস থেকে আনুমানিক চারশ’ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রূপনগর এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় ভারতীয় গরুভর্তি একটি ট্রলার নিয়ে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী দল বাংলাদেশে প্রবেশ করলে টহল দল তাদের চ্যালেঞ্জ করে।
সংঘর্ষে আনুমানিক ১০০-১২০ জন চোরাকারবারী বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাথর, বল্লম ও দেশীয় অস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং গাদা বন্দুক দিয়ে প্রায় ১৫-২০ রাউন্ড গুলি চালায়। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে বিজিবি টহল দল। এ সময় বিজিবির নায়েক মো: আখিরুজ্জামান গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সংঘর্ষে তিনজন স্থানীয় ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে দুইজন এখনও চিকিৎসাধীন। সংঘর্ষ চলাকালে চোরাকারবারীরা গরু ও ট্রলার ফেলে পালিয়ে যায়। অভিযানের পরে বিজিবি ৩৩টি ভারতীয় গরু, একটি ট্রলার এবং বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র জব্দ করে।
সংঘর্ষের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন ট্রলারচালক ওমর আলী (পিতার নাম: শামসুল হক)। দুইদিন নিখোঁজ থাকার পর মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে টাঙ্গুয়ার হাওরে ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ স্থানীয়রা দেখতে পান। খবর পেয়ে মধ্যনগর থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
ঘটনার পর সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিজিবির পক্ষ থেকে চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে মধ্যনগর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। আটককৃত গরু, ট্রলার ও দেশীয় অস্ত্র পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল একে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, “চোরাকারবারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের টহল দলের ওপর হামলা চালায়। এতে একজন সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। আমরা ৩৩টি গরু ও একটি ট্রলার জব্দ করেছি। আইনগত ব্যবস্থা নিতে মধ্যনগর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিবুর রহমান বলেন, “মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং তা ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। মরদেহের শরীরে একটি খত চিহ্ন রয়েছে; ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।”