ঢাকা ০১:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo অটোমেটেড মিউটেশন সিস্টেম ২.১ ও ‘ভূমি’ অ্যাপ উদ্বোধন করলেন ভূমি উপদেষ্টা Logo ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ফ্রান্সকে সহযোগিতার আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার Logo আলেম-ওলামাদের মেহনত ব্যর্থ হয়নি: ধর্ম উপদেষ্টা Logo ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের প্রধানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ Logo সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে আতঙ্ক নয়, সচেতন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের Logo ভূমিকম্প ঝুঁকি হ্রাসে প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত Logo দেশের পথশিশুদের ওপর চলমান যৌন শোষণ ও সুরক্ষা ঘাটতির নতুন প্রমাণ উন্মোচিত Logo কৃষিতে ব্যবহৃত কীটনাশক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে হুমকি তৈরি করছে — মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা Logo দিন-রাতে ড্রেজারের বালু উত্তোলন, শাল্লায় নদীভাঙনের হুমকিতে গ্রামবাসী Logo নাটোরে ট্রাফিক সেবা সপ্তাহ ২০২৫ উদ্বোধন, ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান
রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় অ্যানথ্রাক্স রোগ নিয়ন্ত্রণে টিকাদান, উঠান বৈঠক ও সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার।

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জরুরি ও সমন্বিত কার্যক্রম

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:৫২:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ৫৩৯ বার পড়া হয়েছে

আলী আহসান রবি : বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় গবাদিপশুর মধ্যে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় রোগটির বিস্তাররোধ ও নিয়ন্ত্রণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জরুরি ও সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

অ্যানথ্রাক্স একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত জুনোটিক রোগ, যা গবাদিপশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। এ প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর, স্হানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে গবাদিপশুর টিকাদান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, উঠান বৈঠক, পথসভা, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গবাদিপশুর তড়কা রোগ প্রতিরোধে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করেছে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে আক্রান্ত এলাকা পর্যবেক্ষণ, অসুস্থ পশু জবাই প্রতিরোধ এবং খামারের প্রতিটি পশুকে টিকার আওতায় আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

“ওয়ান হেলথ” কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত উঠান বৈঠক ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করছেন-অসুস্থ পশু জবাই না করা, মৃত পশুকে খোলা স্থানে বা পানিতে না ফেলা, বরং গভীরভাবে মাটিচাপা দেওয়া এবং যেকোনো পশুজনিত অসুস্থতার ক্ষেত্রে দ্রুত নিকটস্থ ভেটেরিনারি হাসপাতাল বা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাকে অ্যানথ্রাক্সে বেশি আক্রান্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

অতিসত্বর প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এলআরআই) রংপুর বিভাগে প্রায় ৩০ লক্ষ অ্যানথ্রাক্স টিকা সরবরাহ করবে, যার মধ্যে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাতেই ২০ লক্ষ টিকা প্রেরণ করা হবে।

রংপুর জেলার নয়টি উপজেলায় পীরগাছা (৫৩,৪০০), কাউনিয়া (৩৪,০০০), রংপুর সদর (২৬,৫০০), মিঠাপুকুর (৩৪,৫০০), গংগাচড়া (৪,৮০০), তারাগঞ্জ (৪,৩০০), বদরগঞ্জ (৫,০০০) ও পীরগঞ্জ (৫,০০০) এখন পর্যন্ত ১,৬৭,০০০ গরুতে টিকা প্রয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া উঠান বৈঠক, পথসভা এবং প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার ৩৬টি কসাইখানায় গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৩৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া গবাদিপশুতে অ্যানথ্রাক্স টিকা প্রদানের জন্য ৩২টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে (মিঠাপুকুর ১৭টি, পীরগাছায় ৮টি ও কাউনিয়ায় ৭টি)।

গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৬,৪০০ গরুতে টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। আক্রান্ত এলাকায় দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গরু পুঁতে ফেলা, টিকাদান, মাইকিং, উঠান বৈঠক এবং লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৫,০০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং ৫টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

রক্তের ১১টি নমুনা পরীক্ষায় সবগুলো নেগেটিভ পাওয়া গেলেও সংগৃহীত ১১টি মাংসের নমুনার মধ্যে ১০টি পজেটিভ পাওয়া গেছে। এছাড়া, মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের উৎস ও পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর উচ্চ পর্যায়ের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে। টিমটি আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে শিগগিরই প্রতিবেদন দাখিল করবে।

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জনপ্রতিনিধি ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

অটোমেটেড মিউটেশন সিস্টেম ২.১ ও ‘ভূমি’ অ্যাপ উদ্বোধন করলেন ভূমি উপদেষ্টা

রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় অ্যানথ্রাক্স রোগ নিয়ন্ত্রণে টিকাদান, উঠান বৈঠক ও সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার।

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জরুরি ও সমন্বিত কার্যক্রম

আপডেট সময় ০৪:৫২:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

আলী আহসান রবি : বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় গবাদিপশুর মধ্যে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় রোগটির বিস্তাররোধ ও নিয়ন্ত্রণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জরুরি ও সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

অ্যানথ্রাক্স একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত জুনোটিক রোগ, যা গবাদিপশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। এ প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর, স্হানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে গবাদিপশুর টিকাদান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, উঠান বৈঠক, পথসভা, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গবাদিপশুর তড়কা রোগ প্রতিরোধে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করেছে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে আক্রান্ত এলাকা পর্যবেক্ষণ, অসুস্থ পশু জবাই প্রতিরোধ এবং খামারের প্রতিটি পশুকে টিকার আওতায় আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

“ওয়ান হেলথ” কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত উঠান বৈঠক ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করছেন-অসুস্থ পশু জবাই না করা, মৃত পশুকে খোলা স্থানে বা পানিতে না ফেলা, বরং গভীরভাবে মাটিচাপা দেওয়া এবং যেকোনো পশুজনিত অসুস্থতার ক্ষেত্রে দ্রুত নিকটস্থ ভেটেরিনারি হাসপাতাল বা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাকে অ্যানথ্রাক্সে বেশি আক্রান্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

অতিসত্বর প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এলআরআই) রংপুর বিভাগে প্রায় ৩০ লক্ষ অ্যানথ্রাক্স টিকা সরবরাহ করবে, যার মধ্যে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাতেই ২০ লক্ষ টিকা প্রেরণ করা হবে।

রংপুর জেলার নয়টি উপজেলায় পীরগাছা (৫৩,৪০০), কাউনিয়া (৩৪,০০০), রংপুর সদর (২৬,৫০০), মিঠাপুকুর (৩৪,৫০০), গংগাচড়া (৪,৮০০), তারাগঞ্জ (৪,৩০০), বদরগঞ্জ (৫,০০০) ও পীরগঞ্জ (৫,০০০) এখন পর্যন্ত ১,৬৭,০০০ গরুতে টিকা প্রয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া উঠান বৈঠক, পথসভা এবং প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার ৩৬টি কসাইখানায় গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৩৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া গবাদিপশুতে অ্যানথ্রাক্স টিকা প্রদানের জন্য ৩২টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে (মিঠাপুকুর ১৭টি, পীরগাছায় ৮টি ও কাউনিয়ায় ৭টি)।

গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৬,৪০০ গরুতে টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। আক্রান্ত এলাকায় দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গরু পুঁতে ফেলা, টিকাদান, মাইকিং, উঠান বৈঠক এবং লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৫,০০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং ৫টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

রক্তের ১১টি নমুনা পরীক্ষায় সবগুলো নেগেটিভ পাওয়া গেলেও সংগৃহীত ১১টি মাংসের নমুনার মধ্যে ১০টি পজেটিভ পাওয়া গেছে। এছাড়া, মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের উৎস ও পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর উচ্চ পর্যায়ের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে। টিমটি আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে শিগগিরই প্রতিবেদন দাখিল করবে।

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জনপ্রতিনিধি ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।