
আলী আহসান রবি: ০৮ জুন, ২০২৫ ঈদুল আজহার দিন কোরবানির উদ্দেশ্যে কেনা একটি মহিষ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড়স্থ ফেনী নদী পেরিয়ে ভারতের ভূখণ্ডে চলে গেলে তা উদ্ধার করে মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মানবিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব বিবেচনায় বিজিবির এই তৎপরতা সীমান্ত এলাকায় প্রশংসিত হয়েছে।
গতকাল শনিবার (৭ জুন) ঈদের নামাজের পর খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার সোনাইপুল বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় কেনা কোরবানির মহিষটি অসাবধানতাবশত দৌড়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতীয় অংশে চলে যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে তাৎক্ষণিকভাবে রামগড়স্থ ৪৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের (রামগড় ব্যাটালিয়ন) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ আহসান উল ইসলাম বিজিবির বাগানবাগান বিওপিকে নির্দেশ দেন বিএসএফের সাথে যোগাযোগ করতে।
জোন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ আহসান উল ইসলাম বলেন, “কোরবানি মুসলমানদের ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি যখন এমন একটি দুর্ঘটনায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তখন রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীর উচিত মানবিকভাবে পাশে দাঁড়ানো। আমরা বিএসএফের সাথে সমন্বয় করে মহিষটি ফেরত আনার উদ্যোগ নেই এবং সেটি সফল হয়েছে।”
বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফের সাথে যোগাযোগ করে মহিষটির অবস্থান জানানো হয়। রাতভর বিএসএফ সদস্যরা মহিষটি আটক করার চেষ্টা চালিয়ে যান। রবিবার (৮ জুন) সকালে তারা মহিষটিকে ধাওয়া দিয়ে আবার বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে পাঠিয়ে দেয়। এরপর বিজিবির সদস্যরা স্থানীয়দের সহায়তায় মহিষটি আটক করতে সক্ষম হন এবং পরে মালিকের কাছে হস্তান্তর করেন
পরবর্তীতে এলাকাবাসী ও বিজিবি সদস্যদের সহায়তায় মহিষটি জবাই করে কোরবানি সম্পন্ন করা হয়।
মহিষটির মালিক নাজিম উদ্দিন বলেন, “ঈদের দিন আমাদের পুরো পরিবার হতাশায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমরা এত টাকা দিয়ে কোরবানির জন্য মহিষটি কিনেছিলাম। বিজিবি’র সহানুভূতিশীলতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় আজ আমরা শুধু পশুটি ফেরত পাইনি, আমাদের ঈদের আনন্দও ফিরে পেয়েছি।”
স্থানীয় সোনাইপুল বাজারের বাসিন্দা আবদুল হাকিম বলেন, “এটা শুধু একটা পশু ফেরত আনার ঘটনা নয়। এটি আমাদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি বিজিবির শ্রদ্ধা এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক অনন্য নজির।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন এমন মানবিক ও আন্তঃসীমান্ত সমন্বিত উদ্যোগ এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও কৃতজ্ঞতা সৃষ্টি করেছে। সীমান্ত এলাকায় বিজিবির এমন সহযোগিতা পারস্পরিক আস্থার প্রতীক হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
ঈদুল আজহা কোরবানির আত্মত্যাগ ও সহানুভূতির শিক্ষা দেয়। বিজিবির এই পদক্ষেপ তা বাস্তবে প্রমাণ করেছে। ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এবং এক অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে বিজিবি আবারও প্রমাণ করল-তারা শুধু সীমান্ত পাহারা দেয় না, বরং মানুষে দুঃখেরও সঙ্গী।