
কাইয়ুম বাদশাহ, সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার লাগোয়া কুশিয়ারা নদীতে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিন-রাতে বালু উত্তোলনের কারণে ভয়াবহ নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে শত শত বসতঘর, আধাপাকা বাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ—ফয়েজুল্লাহপুর ও মার্কুলি বাজারের মাঝামাঝি স্থানে দীর্ঘদিন ধরে চলছে ‘বিটবালু লুটের মহোৎসব’। তাদের দাবি, ড্রেজারগুলো মার্কুলি নৌ–পুলিশ ফাঁড়ির সামান্য দূরত্বেই চলে, কিন্তু পুলিশ রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
বর্ষার পর থেকেই শাল্লা থেকে আকিল–শা বাজার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অস্বাভাবিকভাবে নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। ভাঙনকবলিত এলাকার মাত্র এক কিলোমিটার দূরেই দুটি বৃহৎ ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হলেও প্রশাসনের তদারকি নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মার্কুলি বাজারের প্রভাবশালী মঈনউদ্দীন মেম্বারের যোগসাজশে একটি চক্র দিনে–রাতে এসব ড্রেজার পরিচালনা করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। তবে মেম্বার বিষয়টি অস্বীকার করে মোতাহার আলীসহ কয়েকজনকে দায়ী করেছেন।
অন্যদিকে মোতাহার আলী দাবি করেন—
“আগে ড্রেজার ব্যবসা করতাম, সেই কারণে সাজাপ্রাপ্তও হয়েছিলাম। এখন মঈনউদ্দীন মেম্বার, ফজল আর মিঠু প্রতিদিন ড্রেজার দিয়ে বালু তোলে। পুলিশের সহযোগিতার কারণেই এগুলো বন্ধ হচ্ছে না।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, একবার কয়েকজন পুলিশ ড্রেজারসহ অভিযুক্তদের হাতকড়া পরালেও পরে রহস্যজনকভাবে ছেড়ে দেন। মার্কুলি নৌ–পুলিশ ফাঁড়িতে যোগাযোগ করেও কোনো সাহায্য পাননি বলে জানান তিনি।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের দাবি—
“ড্রেজারগুলো নৌ–পুলিশ ফাঁড়ির চোখের সামনে চলে। না হলে এত সাহস কীভাবে পায়? আমাদের বসতভিটা দিনে দিনে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।”
এ বিষয়ে মার্কুলি নৌ–পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কাওসার গাজী বলেন,
“বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শাল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুর রহমান বলেন,
“অভিযোগ পাওয়ার পর রাতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত অভিযান চলবে।”
পরিবেশবিদদের মতে, কুশিয়ারা নদী দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর একটি। এভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে নদীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য, জীববৈচিত্র্য ও কৃষি ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি নেমে আসতে পারে।
স্থানীয়রা অবৈধ ড্রেজার কার্যক্রম বন্ধ, নদীভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ এবং পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ওঠা ‘যোগসাজশের’ অভিযোগ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
নিজস্ব সংবাদ : 



















