ঢাকা ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo কালিগঞ্জ সরকারী কলেজ ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দকে সংবর্ধনা প্রদান করেছে উপজেলা বিএনপি Logo রোকেয়া মনসুর মহিলা কলেজ ছাত্রদলের কমিটি গঠন Logo কালিগঞ্জের বিভিন্ন কলেজ ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত Logo কুনমিংয়ে চীন ও পাকিস্তানের সাথে ত্রিদেশীয় বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশ Logo এগিয়ে চলি দৃপ্ত পায়ে, আশার আগুন বুকে জ্বালি” স্লোগানে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় Logo বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ এক রোহিঙ্গা যুবককে আটক করেছে বিজিবি Logo পলিথিন উৎপাদনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার: টাস্কফোর্স অভিযানে পলিথিন জব্দ, মালিকের ৩ মাসের কারাদণ্ড Logo নওগাঁয় মন্দিরের জায়গা দখলচেষ্টা’র অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যবসায়ীর সংবাদ সম্মেলন Logo আজকের শিশু তথা নতুন প্রজন্ম দেশ ও জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।—–উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ Logo একাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়

আজকের শিশু তথা নতুন প্রজন্ম দেশ ও জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।—–উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:১৯:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
  • ৫২৮ বার পড়া হয়েছে

আলী আহসান রবি: ঢাকা, ২১ জুন ২০২৫, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, আজকের শিশু তথা নতুন প্রজন্ম দেশ ও জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুদের গড়ে তোলার জন্য প্রথমে শিশুর পারিবার, সামাজ, সংবাদ মিডিয়া, শিল্পপতি ও রাষ্ট্রসহ সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে শিশুশ্রম নিরসন রোধে এগিয়ে আসতে হবে। পুঁজিবাদ সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তে সুন্দর গণতন্ত্রে ফিরে আসতে হবে।
তিনি আজ ঢাকায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএডিসি) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস- ২০২৫ উদযাপনের অংশ হিসেবে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে শিশুশ্রম প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন, বাংলাদেশস্থ আইএলও অফিসের শ্রম প্রশাসন বিভাগের প্রধান নীরান রামজুঠান বক্তৃতা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ১৯২৪ সালে জেনেভায় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শিশু অধিকার ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৯ সালে জাতিসংঘে শিশু অধিকার সনদ ঘোষণা করা হয়; যা চারটি ভাগে বিভক্ত। বর্তমানে বাংলাদেশের আইনে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে দিন দিন শিশুশ্রমিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের যে প্রান্তে তাকাই সেখানেই দেখতে পাই হাজার হাজার শিশু শ্রম দিচ্ছে গার্মেন্টস, কলকারখানা, হোটেল, গ্যারেজ আবার অনেকেই বাস, টেম্পো এসবের হেলপারি করে যাচ্ছে।
‘বাংলাদেশের শিশুশ্রম’-এর অবস্থান শীর্ষক এ সমীক্ষায় শিশুশ্রমের যে কারণগুলো দেখানো হয়েছে তার মধ্যে চরম দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, পরিবারের অস্বচ্ছলতা, পিতৃবিয়োগ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। যে বয়সে শিশুর হাতে থাকার কথা বই-খাতা-কলম সেই বয়সে জীবন-সংগ্রামের জন্য হাতে তুলে নিচ্ছে শ্রমের হাতিয়ার। নিজে কিংবা তার পরিবারের জন্য দু’মুঠো খাবার জোগাতে তারা এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু পারিপার্শ্বিক সমস্যার কারণে স্কুলে যেতে পারে না। অনেকে বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও অর্থের অভাবে তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে না, এরপর তারা জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন কাজে। অনেক কোমলমতি পথশিশু হাতে মাদক ও পলিথিনে ইনহেলার তুলে নিচ্ছে; শিশু গ্যাং তৈরি হচ্ছে, ছিনতাই করছে, যা খুবই ভয়ংকর।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০ লাখ গৃহ শ্রমিকের মধ্যে ৯৩% শিশু গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব গৃহ শ্রমিকরা প্রতিনিয়তই শিকার হচ্ছে মানসিক অত্যাচার, শারীরিক নির্যাতন ও আর্থিক শোষণের। বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ ধরনের কাজ শিশুরা করে থাকে। এসব কাজের মধ্যে ৪৫টি কাজ হচ্ছে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। শিশু শ্রমিকের বৃহৎ একটি সংখ্যা হচ্ছে পথশিশুরা এবং তারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। এক তথ্য মতে, শহরে প্রায় ১৮ লাখ শিশু কাজ করে থাকে এবং গ্রামে কাজ করে থাকে প্রায় ৬৭ লাখ শিশু। এসব শিশুর মধ্যে প্রায় ৪৭ লাখ শিশু নিজেদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে নিয়োজিত রেখেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও আইএলওর জরিপ মতে, কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ রয়েছে ৪৫ ধরনের, তার মধ্যে শিশুরা ৪১টি কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে। যারা গৃহপরিচালিকার কাজ করে তাদের বয়স ১৬ বছরের নিচে। ইউনিসেফের তথ্য মতে, গৃহপরিচালিকার ৮৬ শতাংশই মেয়ে। ৩০ শতাংশের বয়স ছয় থেকে ১১ বছর, আর বাকিদের বয়স ১২ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত। এরা প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করে থাকলেও নির্ধারিত শ্রমের পারিশ্রমিক পায় না। কাজের চাপ ও নানা কারণে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসব শিশুদের সামান্যতম ভুল হলেই হতে হয় নির্যাতনের শিকার। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও হাত তোলে এসব অসহায় কোমলমতি শিশুদের শরীরে। অনেক শিশু নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। প্রায়ই গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হয়।
জাতীয় শিশুনীতি ২০১১-এর ৮ ধারার ৮ দশমিক ৯ এ বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠানে শিশুরা কাজে নিয়োজিত আছে, সেখানে শিশুরা যেন কোনো রূপ মানসিক, শারীরিক, যৌন নির্যাতনের শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তার কার্যক্রম মূল্যায়ন করতে হবে। কিন্তু আদৌ কি এই আইন আমরা দেখতে পাই, না আমরা দেখতে পাই এর ভিন্ন চিত্র। এ থেকে উত্তরণের সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি প্রয়োাজন সচেতনতা এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ। সারাদেশের রেলওয়ে লঞ্চঘাট বাসস্ট্যান্ড এসব এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শিশুকুলিরা। এই পেশায় যুক্ত হওয়ার ফলে এদের মন-মানসিকতার বিকাশ হয় না, বরং অসৎ সঙ্গে থাকার কারণে তারা বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ বা বিভিন্ন ধরনের অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ইয়াবা, সিগারেট, গাজাসহ নানা প্রকার মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবনে এসব শিশু শ্রমিকরা অল্প বয়সেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। অনেক শিশুরা আবার কাজ করতে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়লে এদের মালিক পক্ষ নেয় না কোনো খোঁজখবর।
তিনি আরো বলেন, সরকার শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। শিশু অধিকার পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনে সরকার উন্নযন সংস্থা, মানবাধিকার কর্মীসহ নাগরিক সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা বিদ্যমান থাকার পরেও শিশুদের সার্বিক অধিকার নিশ্চিত করণে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, ইতোমধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পথ শিশুদের পরিসংখ্যানের কাজ শুরু হয়েছে , তাদের ডাটাবেজ তৈরি করে যোগ্যতাঅনুযায়ী কর্মমুখী জায়গায় আনতে চাই। সরকারের পাশাপাশি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পারে শিশুশ্রম বন্ধ করতে। সমাজের সব বিত্তবান মানুষের প্রতি আহ্বান, আসুন আমরা সবাই এসব শিশুদের দিকে বাড়িয়ে দিই আমাদের সাহায্যের হাত। সরকারের পাশাপাশি আমরা এদের শিক্ষার অধিকার, সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এগিয়ে আসি। তাহলেই তাদের মুখে ফুটবে হাসি।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস- ২০২৫ উপলক্ষে “শিশুশ্রমের প্রধান দায় রাষ্ট্রের নয়, সমাজের” শীর্ষক ছায়া সংসদে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতর্কীকগণ অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতা শেষে উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০ হাজার টাকার চেক ও রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকার চেকসহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করেন। উপদেষ্টা এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শিশুশ্রম প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক যুক্তিতর্ক তুলে ধরার জন্য দুটি দলের অংশগ্রহণকারী বিতর্কীকগণকে ধন্যবাদ জানান।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কালিগঞ্জ সরকারী কলেজ ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দকে সংবর্ধনা প্রদান করেছে উপজেলা বিএনপি

আজকের শিশু তথা নতুন প্রজন্ম দেশ ও জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।—–উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

আপডেট সময় ০৫:১৯:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

আলী আহসান রবি: ঢাকা, ২১ জুন ২০২৫, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, আজকের শিশু তথা নতুন প্রজন্ম দেশ ও জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুদের গড়ে তোলার জন্য প্রথমে শিশুর পারিবার, সামাজ, সংবাদ মিডিয়া, শিল্পপতি ও রাষ্ট্রসহ সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে শিশুশ্রম নিরসন রোধে এগিয়ে আসতে হবে। পুঁজিবাদ সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তে সুন্দর গণতন্ত্রে ফিরে আসতে হবে।
তিনি আজ ঢাকায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএডিসি) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস- ২০২৫ উদযাপনের অংশ হিসেবে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে শিশুশ্রম প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন, বাংলাদেশস্থ আইএলও অফিসের শ্রম প্রশাসন বিভাগের প্রধান নীরান রামজুঠান বক্তৃতা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ১৯২৪ সালে জেনেভায় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শিশু অধিকার ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৯ সালে জাতিসংঘে শিশু অধিকার সনদ ঘোষণা করা হয়; যা চারটি ভাগে বিভক্ত। বর্তমানে বাংলাদেশের আইনে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে দিন দিন শিশুশ্রমিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের যে প্রান্তে তাকাই সেখানেই দেখতে পাই হাজার হাজার শিশু শ্রম দিচ্ছে গার্মেন্টস, কলকারখানা, হোটেল, গ্যারেজ আবার অনেকেই বাস, টেম্পো এসবের হেলপারি করে যাচ্ছে।
‘বাংলাদেশের শিশুশ্রম’-এর অবস্থান শীর্ষক এ সমীক্ষায় শিশুশ্রমের যে কারণগুলো দেখানো হয়েছে তার মধ্যে চরম দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, পরিবারের অস্বচ্ছলতা, পিতৃবিয়োগ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। যে বয়সে শিশুর হাতে থাকার কথা বই-খাতা-কলম সেই বয়সে জীবন-সংগ্রামের জন্য হাতে তুলে নিচ্ছে শ্রমের হাতিয়ার। নিজে কিংবা তার পরিবারের জন্য দু’মুঠো খাবার জোগাতে তারা এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু পারিপার্শ্বিক সমস্যার কারণে স্কুলে যেতে পারে না। অনেকে বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও অর্থের অভাবে তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে না, এরপর তারা জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন কাজে। অনেক কোমলমতি পথশিশু হাতে মাদক ও পলিথিনে ইনহেলার তুলে নিচ্ছে; শিশু গ্যাং তৈরি হচ্ছে, ছিনতাই করছে, যা খুবই ভয়ংকর।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০ লাখ গৃহ শ্রমিকের মধ্যে ৯৩% শিশু গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব গৃহ শ্রমিকরা প্রতিনিয়তই শিকার হচ্ছে মানসিক অত্যাচার, শারীরিক নির্যাতন ও আর্থিক শোষণের। বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ ধরনের কাজ শিশুরা করে থাকে। এসব কাজের মধ্যে ৪৫টি কাজ হচ্ছে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। শিশু শ্রমিকের বৃহৎ একটি সংখ্যা হচ্ছে পথশিশুরা এবং তারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। এক তথ্য মতে, শহরে প্রায় ১৮ লাখ শিশু কাজ করে থাকে এবং গ্রামে কাজ করে থাকে প্রায় ৬৭ লাখ শিশু। এসব শিশুর মধ্যে প্রায় ৪৭ লাখ শিশু নিজেদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে নিয়োজিত রেখেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও আইএলওর জরিপ মতে, কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ রয়েছে ৪৫ ধরনের, তার মধ্যে শিশুরা ৪১টি কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে। যারা গৃহপরিচালিকার কাজ করে তাদের বয়স ১৬ বছরের নিচে। ইউনিসেফের তথ্য মতে, গৃহপরিচালিকার ৮৬ শতাংশই মেয়ে। ৩০ শতাংশের বয়স ছয় থেকে ১১ বছর, আর বাকিদের বয়স ১২ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত। এরা প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করে থাকলেও নির্ধারিত শ্রমের পারিশ্রমিক পায় না। কাজের চাপ ও নানা কারণে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসব শিশুদের সামান্যতম ভুল হলেই হতে হয় নির্যাতনের শিকার। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও হাত তোলে এসব অসহায় কোমলমতি শিশুদের শরীরে। অনেক শিশু নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। প্রায়ই গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হয়।
জাতীয় শিশুনীতি ২০১১-এর ৮ ধারার ৮ দশমিক ৯ এ বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠানে শিশুরা কাজে নিয়োজিত আছে, সেখানে শিশুরা যেন কোনো রূপ মানসিক, শারীরিক, যৌন নির্যাতনের শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তার কার্যক্রম মূল্যায়ন করতে হবে। কিন্তু আদৌ কি এই আইন আমরা দেখতে পাই, না আমরা দেখতে পাই এর ভিন্ন চিত্র। এ থেকে উত্তরণের সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি প্রয়োাজন সচেতনতা এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ। সারাদেশের রেলওয়ে লঞ্চঘাট বাসস্ট্যান্ড এসব এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শিশুকুলিরা। এই পেশায় যুক্ত হওয়ার ফলে এদের মন-মানসিকতার বিকাশ হয় না, বরং অসৎ সঙ্গে থাকার কারণে তারা বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ বা বিভিন্ন ধরনের অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ইয়াবা, সিগারেট, গাজাসহ নানা প্রকার মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবনে এসব শিশু শ্রমিকরা অল্প বয়সেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। অনেক শিশুরা আবার কাজ করতে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়লে এদের মালিক পক্ষ নেয় না কোনো খোঁজখবর।
তিনি আরো বলেন, সরকার শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। শিশু অধিকার পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনে সরকার উন্নযন সংস্থা, মানবাধিকার কর্মীসহ নাগরিক সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা বিদ্যমান থাকার পরেও শিশুদের সার্বিক অধিকার নিশ্চিত করণে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, ইতোমধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পথ শিশুদের পরিসংখ্যানের কাজ শুরু হয়েছে , তাদের ডাটাবেজ তৈরি করে যোগ্যতাঅনুযায়ী কর্মমুখী জায়গায় আনতে চাই। সরকারের পাশাপাশি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পারে শিশুশ্রম বন্ধ করতে। সমাজের সব বিত্তবান মানুষের প্রতি আহ্বান, আসুন আমরা সবাই এসব শিশুদের দিকে বাড়িয়ে দিই আমাদের সাহায্যের হাত। সরকারের পাশাপাশি আমরা এদের শিক্ষার অধিকার, সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এগিয়ে আসি। তাহলেই তাদের মুখে ফুটবে হাসি।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস- ২০২৫ উপলক্ষে “শিশুশ্রমের প্রধান দায় রাষ্ট্রের নয়, সমাজের” শীর্ষক ছায়া সংসদে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতর্কীকগণ অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতা শেষে উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০ হাজার টাকার চেক ও রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকার চেকসহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করেন। উপদেষ্টা এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শিশুশ্রম প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক যুক্তিতর্ক তুলে ধরার জন্য দুটি দলের অংশগ্রহণকারী বিতর্কীকগণকে ধন্যবাদ জানান।